বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে তিনদিন ধরে কার্যত অচল মুরারই। এদিনও সকাল ৮টা থেকে মুরারই-রঘুনাথগঞ্জ যাওয়ার রাস্তার হিয়াতনগরের চারমাথা মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে যোগাযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্য সড়কে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। একইভাবে নলহাটির সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল ১২টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে।
অন্যদিকে, এদিন দুপুর ২টো নাগাদ নলহাটির লোহাপুরের কাঁটাগড়িয়া মোড়ে রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা পুরনো একটি ভাঙাচোরা চারচাকা গাড়ি সড়কের মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া রাস্তাজুড়ে টায়ার জ্বালানো হয়। পরে তাঁরা মোদি ও অমিত শাহর কুশপুতুল দাহ করেন। অবরোধের জেরে প্রচুর যানবাহন ও যাত্রীবোঝাই বাস দাঁড়িয়ে পড়ে।
এদিন সিএএ-র প্রতিবাদে জেলার প্রতিটি ব্লকের সঙ্গে এই ব্লকের লোহাপুরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে মিছিল হওয়ার কথা ছিল। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখার জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখানে কর্মসূচির তোড়জোড় চলছিল। বিক্ষোভকারীরা সেই মঞ্চে ভাঙচুর চালাতে আসে। বাধা দিতে গিয়ে রোষের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য সহ স্থানীয় নেতৃত্ব। তাঁদের হেনস্তা করে নামিয়ে মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। যদিও ত্রিদিববাবু হেনস্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বাইরের লোক ছিল। তারাই মঞ্চে ভাঙচুর চালায়। এদিন এই অশান্তির জেরে তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল স্থগিত রাখা হয়।
অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে মিছিল করে এসে লাইনে নেমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর লোহাপুর স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরে গেটম্যানের রুম, টিকিট কাউন্টার ও ওয়েটিং রুমে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের একটা অংশ নাবালক ছিল। পরে বিক্ষোভকারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে বক্তব্য রাখতে শুরু করার পাশপাশি শাবল দিয়ে লাইন তুলে সরিয়ে দেয়। যদিও শনিবার মুর্শিদাবাদের ঘটনার জেরে রাত থেকেই এই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে রেল। ফলে, যাত্রী ভোগান্তি না হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার মানুষ। বুকিং সুপারভাইজার শ্যামল সাউ বলেন, বিক্ষোভকারীরা আমাদের চড়থাপ্পড় মেরে বের করে দেয়। পরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। কাউন্টারে তিনদিনের ৩৫হাজার টাকাও লুট হয়েছে।
এদিন সাঁইথিয়ার বাতাসপুর স্টেশন সংলগ্ন জায়গাতেও অবরোধ করা হয়। টায়ার জ্বালিয়ে সাঁইথিয়া-বোলপুর রাস্তাও অবরোধ করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ ওঠে। অন্যদিকে, ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকে তৃণমূলের তরফে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মিছিল বের হয়। যেখানে দলের সুপ্রিমো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলেছেন, সেখানে এদিন মিছিল শেষে কোটাসুরে বিজেপির কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। লাগোয়া গ্রামের কয়েকটি বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ।
বিজেপির ব্লক সভাপতি সন্দীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূলের মিছিল থেকে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ২০মিনিট ধরে তাণ্ডব চললেও পুলিসের দেখা মেলেনি। ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পর পুলিস আসে। যদিও তৃণমূলের এই ব্লকের সভাপতি আশিস চন্দ্র বলেন, মিছিলে কিছু বাইরের লোক ঢুকে পড়েছিল। তারাই এই অশান্তি ছড়িয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দোষীদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিসকে বলেছি।
এদিন নলহাটিতে মুসিলম সম্প্রদায়ের মানুষজন শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে রামমন্দির তলায় হাজির হয়। এদিন রামপুরহাটে মিছিল শেষে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এনআরসি আমরা কোনওমতেই হতে দেব না। হিংসা নয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আপনারা সংগঠিত হোন। যাঁরা আমাদের দলীয় মঞ্চ ভেঙেছেন তাঁরা বিদ্বেষমূলক আচরণ করেছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির উস্কানিতে তাঁরা এই কাজ করছেন। এর তীব্র নিন্দা করছি।