বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
স্কুলের দোতলার ২৫ ফুট বাই ১৫ ফুট একটি রুমে তৈরি হয়েছে মডেল গ্যালারি। একদিকে রয়েছে পড়ুয়াদের জন্য লাইব্রেরি। সেখানে রঙিন সাজানো র্যা কে রয়েছে পড়ার বই, গল্পের নানা ধরনের বই। অন্যদিকে, দেওয়ালে প্লাইউড দিয়ে তৈরি হয়েছে গ্যালারি। ভারতীয় যাদুঘরে যেমন গ্যালারিতে বিভিন্ন রাজ্যের জনজীবন তুলে ধরা রয়েছে, একই আদলে প্রত্যন্ত গ্রামের এই প্রাইমারি স্কুলে তৈরি হয়েছে বাংলার জনজীবন নিয়ে অভিনব যাদুঘর। কী নেই সেখানে! মডেল গ্যালারি, হারিয়ে যাওয়া বায়োস্কোপ, কাঠপুতুল, পটচিত্রের মতো অনেক কিছুই আছে।
প্রধান শিক্ষক শোভন দাস নিজে একজন শিল্পী হওয়ায় অন্যান্য শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়ে গ্রামের শিশুদের জন্য স্বপ্নের স্কুল তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলেন, বইয়ের একঘেয়ে পঠনপাঠনের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতেই মডেল গ্যালারি বা আর্ট গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। এখানে ছাত্রছাত্রীদের বড় ভূমিকা রয়েছে। ওদের ছোট থেকেই স্কুলে মাটির মডেল তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মডেলের মাধ্যমে হাতেকলমে বিজ্ঞান, ভূগোলের পাঠ দেওয়া হয়। পাঠ্যসূচি মেনে আমরা মডেল গ্যালারি তৈরি করেছি। একজন কামারের বেশভূষা কেমন, তার বাড়ি বা কী কী যন্ত্র থাকে, কুমোর কিংবা মুচি কীভাবে কাজ করেন, সেসব রয়েছে গ্যালারিতে। আদিবাসীদের জীবন, পশুপালক, বাংলার বাউল, গ্রামীণ হাট থেকে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ সবই রয়েছে গ্যালারিতে।
শিক্ষকরা বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে স্কুলে স্মার্ট ক্লাস চালু হয়েছে। ডিজিটাল ক্লাসরুমে বসানো হয়েছে ব্ল্যাকবোর্ডের বদলে একটি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে বোর্ড। রয়েছে প্রজেক্টর মেশিন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের জন্য ওয়াইফাই সংযোগ। এক বছরেই পড়ুয়ারা ডিজিটাল ক্লাসরুমে পড়াশোনা করে রীতিমতো স্মার্ট হয়ে উঠেছে। কোনও শিক্ষক না এলে ক্লাস থ্রি-ফোরের ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই স্মার্ট ক্লাস চালু করে অঙ্ক কষে, বিজ্ঞান পড়ে। স্কুলে পাঠদান আকর্ষণীয় করার জন্য পুতুল নাচের বা পটচিত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ছোটদের কাছে পড়াশোনাকে কীভাবে আরও জীবন্ত করা যায়, তা ভাবতে গিয়ে প্রতিটি ক্লাসের দেওয়ালে দেওয়ালে ম্যুরাল তৈরি হয়েছে। দার্জিলিংয়ের চা বাগানের ইতিবৃত্ত, রাজস্থানের মরুভূমির মানুষের জীবনকাহিনীর বর্ণনা, বিজ্ঞানের নানা বিষয় এবং বিজ্ঞানী ও মনীষীদের রঙিন ম্যুরাল তৈরির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছেন রাজ্যের পরিদর্শকরা।
হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুব্রত হাজরা বলেন, কিসমৎ শিবরামনগর ২ প্রাইমারি স্কুলটি হলদিয়া শুধু নয়, জেলার গর্ব। শিশুদের নতুন ভাবনার পাঠদানের ক্ষেত্রে স্কুলটিকে মডেল হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নির্মল বিদ্যালয়, বেস্ট পারফর্মিং স্কুল বা শিশুমিত্র বিদ্যালয় পুরস্কার পেয়েছে ওরা। স্থানীয় অনেক অভিভাবক বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর চেয়ে এখানে পড়াতে বেশি আগ্রহ দেখান। গ্রামের স্কুলের এই মডেল এখন অনুসরণ করছে শহরের স্কুলও। এজন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয় অভিভাবকদের ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য।