বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
আগে কাস্তে দিয়ে ধান কাটায় সামান্য কিছু অংশ জমিতে পড়ে থাকত। জমিতে ধান ঝাড়াও হতো না। ফলে, খড় পড়ে থাকার সমস্যা ছিল না। এখন শ্রমিকের অভাব এবং খরচ ও সময় বাঁচাতে বেশিরভাগ কাজই হয় যন্ত্রে। তাতে অনেকটা লম্বা গোড়া ও খড়ের টুকরো পড়ে থাকছে। পরবর্তী ফসল চাষের জন্য দ্রুত জমি সাফ করার তাগিদে তাতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন অনেক চাষি। কিন্তু, তার ফলে যে দূষণ ছড়াচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়নি। নাড়া পুড়িয়ে ছাই করে মাটিতে মিশিয়ে দিলে জমি উর্বর হয় বলে মনে করেন চাষিরা। কিন্তু কৃষি দপ্তরের মতে, এরফলে জমি উর্বর তো দূর, উল্টে মাটিতে থাকা চাষের জন্য উপকারী পোকামাকড়, জীবাণু মরে যাওয়ায় চাষের ক্ষতিই হয়। এছাড়া পরিবেশ দূষণ তো হয়ই।
কৃষি দপ্তর ধানগাছের ওই অংশ মাঠে পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এব্যাপারে চাষিদের সচেতন করতে স্থানীয় কৃষি আধিকারিকদের উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চাষিদের জন্য লিফলেট বিলি করা হয়। এছাড়া কৃষিমেলায় চাষিদের সচেতনতা, ফ্লেক্স টাঙিয়ে ও মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু, নাড়া পোড়ানোর ক্ষেত্রে রাশ টানতে ব্যর্থ কৃষি দপ্তর। এক কৃষি আধিকারিকের কথায়, চাষের জন্য জমির উপরিভাগের ছ’ইঞ্চি অংশ গুরুত্বপূর্ণ। আগুন লাগালে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জমির এই অংশ। ফলে, উর্বরতা হারিয়ে জমি বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
তবে নিষেধাজ্ঞার পরেও জমিতে আগুন লাগানো চলছেই বলে অভিযোগ। জেলার সর্বত্র সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে, খোদ কৃষিমন্ত্রীর বিধানসভা এলাকায় এচিত্র প্রকট হওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে।
রামপুরহাট শহর ঘেঁসা দানগ্রাম। রামপুরহাট-মাড়গ্রাম রোডের ধারে জমির উপর উঁচু করে নাড়া জড়ো করে তাতে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে বিঘার পর বিঘে জমিতে। কালো ধোঁয়ায় ঢাকা যায় আশপাশ। ওই জমি থেকে কয়েক হাত দূরে বাড়ি নুরুল বাসারের। তিনি বলেন, ধোঁয়া ও দূষণের জন্য ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। বাইরে বেরিয়ে শ্বাস নেব, তাঁরও উপায় নেই। পুরো এলাকা ধোঁয়া ঢেকে গিয়েছে। পরিবেশ ভবিষ্যতের কথা ভেবে সচেতনতা তৈরি ছাড়াও নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিত।
বীরভূম জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা(প্রশাসন) একেএম মিনাজুর আহাসান বলেন, আগুন না ধরিয়ে নাড়া পচিয়ে সার হিসেবে জমিতে মিশিয়ে দেওয়া যায়। তাতে জমিতে কেঁচো জাতীয় প্রাণীর সংখ্যা বাড়তে পারে। জমির উর্বরতাও বাড়ে। নাড়া পোড়ানোর ফলে জমির উর্বরতা কমে। চাষিদের সচেতন করেই এই প্রবণতা রোধে জোর দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রে জানা গিয়েছে, নাড়া পুড়িয়ে দূষণ ছড়ালে ১৯৮১সালের দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(৫) ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে। দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বায়ু দূষণ রুখতে রাজ্যে নাড়া পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরেও কেউ তা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।