বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কালনার এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী বলেন, মৃতার বাবা এদিন জামাইয়ের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্তে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অচিন্ত্য পেশায় দিনমজুর। বছর দুয়েক আগে মন্তেশ্বরের ধাওড়াপাড়ার বাসিন্দা জবার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝে মধ্যেই অশান্তি চলত। জবাদেবী সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর থেকে অচিন্ত্য তাকে সন্দেহের চোখে দেখত। এমনকী প্রায়ই তাঁকে মারধর করা হতো বলে অভিযোগ। পরে তাঁদের একটি কন্যা সন্তান হয়। এদিকে কন্যাসন্তান হওয়ার পর স্ত্রীর প্রতি অচিন্ত্যের অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। সাত মাস আগে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাপেরবাড়ি চলে গিয়েছিলেন জবা। তারপর থেকে বাড়িতে একাই রান্না করে খেতে হতো অচিন্ত্যকে। সপ্তাহ দুয়েক আগে পুনরায় স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে সে। কিন্তু সন্দেহ যেন পিছু ছাড়ছিল না অচিন্ত্যর। এদিন বেলা ১১টা নাগাদ গ্রামে পরিচারিকার কাজ করে অচিন্ত্যের মা উর্মিলাদেবী বাড়ি ফেরেন। তিনি দেখতে পান, মেজো ছেলে অচিন্ত্যর ঘরের বারান্দায় রক্তাক্ত অবস্থায় নাতনি পড়ে আছে। নাক মুখ দিয়ে অনর্গল রক্ত বের হচ্ছিল। কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নেন। এরপর ওই ঘরে ঢুকেই উর্মিলাদেবী দেখেন, বিছানায় বউমার নিথর দেহ পড়ে আছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা। পাশেই ছোট একটি বাঁশের লাঠি পড়ে আছে। সম্ভবত বউমার মাথায় ওই বাঁশের লাঠি দিয়ে মেরে খুন করা হয় বলে তিনি বুঝতে পারেন। এরপর ছেলের খোঁজে পাশের রান্না ঘরে যান তিনি। সেখানে অচিন্ত্যকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলতে দেখেন। এরপরেই উর্মিলাদেবী চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তাঁর আর্তনাদ শুনে প্রতিবেশীরা ওই বাড়ি ছুটে আসেন। শিশুকন্যাটিকে দ্রুত মন্তেশ্বর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিস ওই বাড়িতে যায়। মৃতা জবা সাঁতরার বাবা টোটন রায় ঘটনাস্থলে যান।
টোটনবাবু বলেন, বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে মারধর করত জামাই। বেশ কয়েকবার সালিশি সভা ডেকে বিষয়টি মিটমাট করা হয়। জামাই হীনমন্যতায় ভুগছিল। মেয়েকে বিশ্বাস করত না। সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। মেয়ে মারধর সহ্য করতে না পেরে আমার বাড়িতে এসে থাকা শুরু করে। সপ্তাহ দুয়েক আগে জামাই আমার বাড়িতে এসে অনুশোচনার কথা বলে। তারা এবার থেকে শান্তিতে সংসার করবে বলে কথা দেয়। কিন্তু তারপরেও মেয়েকে খুন করে ফেলল। সে ছোট নাতনিকেও ছাড়েনি। মাটিতে ওকে আছাড় মেরে খুন করার চেষ্টা করেছিল। নাতনিটার এখন কী হবে বুঝতে পারছি না। আমি ঘটনার কথা থানায় জানিয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিন ভাইয়ের মধ্যে অচিন্ত্য হল মেজো। একই বাড়িতে আলাদা আলাদা ঘরে থাকে তারা। এদিন সকালে অচিন্ত্য, তার স্ত্রী এবং শিশুকন্যা ছাড়া বাড়িতে অন্য কেউ ছিল না। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে তার এক বউদি বাপেরবাড়ি গিয়েছিলেন। অচিন্ত্যর মা কাজে গিয়েছিলেন। বেলা ১০টা নাগাদ সন্দেহের কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। তুমুল চিৎকার-চেঁচামেচি চললেও প্রতিবেশীদের তা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা অনুমান করেন যে, অন্যান্য দিনের মতোই তাদের অশান্তি চলছে। তাই তাঁরাও কেউ আসেননি। তবে অচিন্ত্য যে এত বড় কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে তা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বলে প্রতিবেশীদের দাবি।