কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
অনিলবাবুর স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট এক চিলতে বাড়ি। ধার দেনা করে কোনওরকমে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। অনিলবাবুর স্ত্রী অনিতা মাঝি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার স্বামী প্রথমদিন থেকে তৃণমূল করেন। আমার পুরো পরিবারটা ভেসে গেল। এখন কীভাবে সংসার চালাব, জানি না। তিনি কথা বলতে বলতে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দলীয় পার্টি অফিস থেকে অনিলবাবুর বাড়ির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। বাড়ি ঢোকার কিছুটা আগে আলমপুর আদিবাসী পাড়া। রাস্তার বাঁ দিকে একটি বড় পুকুর। সেখানে তাঁর বাইক পড়েছিল। রাস্তার ডানদিকে কিছুটা খেত পেরিয়ে আরও একটি পুকুর। সেই পুকুরেই তাঁর মৃতদেহ পড়েছিল। রাস্তার ধার থেকে পুকুরের পাড় পর্যন্ত চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। পুকুরের পাড়ে মাথার ঘিলুও পড়ে রয়েছে। পুলিসের অনুমান, রাস্তায় আটকে তাঁকে কোপানো হয়। তারপর পুকুরের পাড়ে নিয়ে গিয়ে মাথা থেঁতলানো হয়েছে।
দলীয় কর্মীকে খুন করার খবর পেয়েই বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুই। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমাদের পার্টিঅফিসে একটি বৈঠক ছিল। সেখানে এসেছিলেন আমাদের সক্রিয় কর্মী অনিল মাঝি। বৈঠক শেষে তিনি বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বিজেপির লোকজন রাস্তায় তাঁকে আটকে নৃশংসভাবে খুন করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে স্থানীয় লোকজন দেখেন, রাস্তার উপর একটি বাইকের চাবি পড়ে রয়েছে। সেই চাবি কার খোঁজ করতে গিয়েই দেখেন, পুকুরে একটি বাইক পড়ে রয়েছে। বাইকের কিছুটা অংশ ভেসে রয়েছে। তারপর রক্তের দাগ দেখে স্থানীয় লোকজন অন্যদিকের পুকুরে গিয়ে দেখেন, অনিলবাবুর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। পা দু’টি বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। শরীরের বাকি অংশ জলের ভিতরে। খবর পেয়ে মাধবডিহি থানার পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। তারপর ময়নাতন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি মৃতদেহে মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। তারপর মন্ত্রী নিজে মৃতদেহ নিয়ে মাধবডিহির আলমপুর গ্রামে যান। তাঁর সঙ্গে জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত, জেলা পরিষদের মেন্টর উজ্জ্বল প্রামাণিক প্রমুখ ছিলেন। তাঁরা মৃতের স্ত্রী ও পরিবারকে সমবেদনা জানান।
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, অনিলবাবু আমাদের দলের দীর্ঘদিনের কর্মী। অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। বিজেপির লোকজন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই এই খুন করেছে। আসলে মাধবডিহি এখন শান্ত। সেই শান্তির পরিবেশকে অশান্ত করতেই বিজেপি এই খুনের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা পুলিসকে বলেছি, অবিলম্বে যেন দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা অনিলবাবুর পরিবারের পাশে রয়েছি।
অন্যদিকে, বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক বিজন মণ্ডল বলেন, তিন কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে তৃণমূল জেতার পর থেকে আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমরাই আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এই অবস্থায় আমরা তৃণমূল কর্মীকে খুন করতে যাব কেন? আমরা খুনের রাজনীতি করি না। এটা ওদের দলীয় কোন্দল। আমরা চাই, পুলিস নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করুক।
যে গ্রেপ্তার হয়েছে সে তো এলাকায় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। উত্তরে বিজনবাবু বলেন, আমাদের সমর্থক হতে পারে, কিন্তু সক্রিয় কোনও কর্মী নয়।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, এই খুনের ঘটনায় আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদেরও শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।