সংবাদদাতা, কান্দি: মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিগ বাজেটের জোড়া প্রকল্প পেয়ে খুশির জোয়ার কান্দি মহকুমা এলাকায়। বহু প্রতীক্ষিত কান্দি রামেন্দ্রসুন্দর অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন ও রণগ্রাম দ্বিতীয় সেতুর শিলান্যাসে খুশির জোয়ার সাধারণ বাসিন্দা থেকে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে। হাঁফ ছেড়েছেন যানবাহন চালকরা। এছাড়াও মহকুমার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসে বুধবার এলাকায় কার্যত উৎসবের চেহারা নেয়।
এদিন কান্দি মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় দুপুর ২টোর আগেই টেলিভিশনের সামনে বসে পড়েন। বিশেষ করে তৃণমূল সমর্থিত ক্লাবগুলির মধ্যে ভিড় দেখা যায়। সাগরদিঘির সভায় মুখ্যমন্ত্রী এলাকার বাসিন্দাদের কী উপহার দেন, সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন তাঁরা। একসময় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে কান্দি মহকুমা এলাকার রাস্তাঘাট থেকে ছাত্রাবাস সহ বহু জনমুখী প্রকল্প। বহু প্রতীক্ষিত কান্দি পুরসভা ভবন সংলগ্ন এলাকায় রামেন্দ্রসুন্দর অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। এরপর বহরমপুর-সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কে রণগ্রামে দ্বিতীয় সেতুর শিলান্যস করতেই বাসিন্দাদের মধ্যে হই-হুল্লোড় পড়ে যায়। কান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকার কয়েকটি দোকানে মুখ্যমন্ত্রীর লাইভ অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে রণগ্রাম সেতুর কথা উঠতেই তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ট্রাকচালক আবসার রহমান বললেন, সেতুর শিলান্যাসের ফলে কিছুটা চিন্তা দূর হল। এবার কবে কাজ শুরু হয়, কতদিনে শেষ হয় দেখা যাক। উল্লেখ্য, কয়েকমাস ধরে ওই দুর্বল সেতুর উপর ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েকমাস ধরে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে যানবাহন মালিকরা।
এদিকে প্রতিশ্রুতি ছিল চার বছরেই তৈরি হবে অডিটোরিয়াম। কিন্তু ১৫বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তৈরি হয়নি অডিটোরিয়াম। ফলে কান্দির সংস্কৃতি জগতের মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। উল্লেখ্য, ২০০৩-০৪ আর্থিক বর্ষে ওই অডিটোরিয়ামের কাজ শুরু হয়। কান্দি পুরসভা ভবনের পশ্চিম ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর দক্ষিণে ওই অডিটোরিয়াম তৈরি হয়েছে। প্রায় একবিঘা জায়গার উপর বিশালাকার অডিটোরিয়ামের মূল ভবন তৈরি হয়েছে। ২০০৩-০৪আর্থিক বর্ষে অডিটোরিয়ামের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ১৬লক্ষ ৬৯হাজার টাকা। ওইসময় মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ সিপিএমের দখলে ছিল। এর পরবর্তীতে কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদ দু’বার টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু তারপরেও অডিটোরিয়ামের কাজ বহু বাকি ছিল। কিন্তু গত দু’বছর ধরে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ তিনবার অর্থ বরাদ্দ করে এর কাজ সম্পূর্ণ করে। সব মিলিয়ে প্রায় ৯০লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় অডিটোরিয়ামের জন্য। অবশেষে এদিন মুখ্যমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন।
এদিকে অডিটোরিয়াম উদ্বোধনের পর থেকেই এলাকার সংস্কৃতি জগতের মানুষের মধ্যে খুশির জোয়ার নেমে এসেছে। তবে অনেকে অডিটোরিয়ামের কাজ এখনও কিছুটা বাকি থাকায় খুব একটা খুশি হতে পারেননি। কান্দি ঝড় নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক পঞ্চানন দাস বলেন, অডিটোরিয়ামের কাজ শেষ হওয়ার আগেই উদ্বোধন হয়ে গেল। এতে শিল্পীরা যে খুশি তা বলা যাবে না। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।
কান্দির বিধায়ক তথা সংগীতশিল্পী কংগ্রেসের সফিউল আলম খান বলেন, সেতুর শিলান্যাস করেছেন ভালো কথা। অডিটোরিয়ামের কাজ শেষ হওয়ার আগেই এটির উদ্বোধন করা হল। অডিটোরিয়ামে দর্শক মাটিতে বসে আনন্দ অনুষ্ঠান দেখবেন! আসলে এই সরকার কাজের চেয়ে ঢাকঢোল পেটাতে বেশি ভালবাসে। সেটাই আবার প্রমাণিত হল। যদিও কান্দি পুরসভার চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এদিন কান্দি মহকুমা এলাকায় ঢালাও প্রকল্পের কথা বলেছেন। এতে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে খুশির জোয়ার নেমেছে। বিশেষ করে রণগ্রাম দ্বিতীয় সেতু ও অডিটোরিয়াম তৈরির বিষয়টি মানুষের বহু বছরের দাবি পূরণ করেছে।