পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
তারাপীঠে মা তারা আরাধ্যা দেবী। এখানে কোনও মৃণ্ময়ী মূর্তি গড়ে দেবী পুজোর চল নেই। মা তারার অঙ্গেই দুর্গা, কালী, সরস্বতী, জগদ্ধাত্রী, লক্ষ্মী, অন্নপূর্ণা সহ সমস্ত দেবীর আরাধনা করা হয়। মূলত, কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্তিক পুজো দেখতে অভ্যস্ত মানুষ। কিন্তু, তারাপীঠ তার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেবী অন্নপূর্ণার বদলে কার্তিক পুজো করেন এলাকার মানুষ। জানা গিয়েছে, প্রায় ৫৮বছর আগে নবান্ন উৎসবের দিন তারাপীঠ মন্দির কমিটি প্রথম কার্তিক পুজো করে। তখন এই একটি মাত্র পুজোকে ঘিরে উন্মাদনা ছিল তারাপীঠবাসীর। বর্তমানে পুজোর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বছর যত গড়াচ্ছে ততই এই পুজোর জাঁকজমক বাড়ছে। লেগেছে থিমের ছোঁয়া। তারাপীঠ মন্দির লাগোয়া স্থায়ী মণ্ডপে মৃণ্ময়ী মূর্তি গড়ে পুজো করে আসছে তারাপীঠ মন্দির কমিটি। এবার তাঁদের পুজো ৫৯বছরে পা দিল। এবার তাঁদের থিম ‘হারিয়ে গিয়েছে অতীতের সেই দিনগুলি’। মাটির তৈরি পুতুলে হাতের জাদুতে রূপ পেয়েছে রাজকন্যা থেকে রাজপুত্তুর, লক্ষ্মীপেঁচা থেকে হাতি-ঘোড়া। প্রাচীন সেই কাঠপুতুলের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে থিমের মাধ্যমে।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য গুরুশরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর চল নেই তারাপীঠে। তাই কার্তিক পুজোই আমাদের কাছে বড় উৎসব। বাজেট প্রায় ১২লক্ষ টাকা। পুজোর চারদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেধাবী সংবর্ধনা ছাড়াও দুঃস্থদের বস্ত্রদান করা হবে।
অন্যদিকে, রাজপ্রাসাদ আদলে মণ্ডপ ও ঝিনুক দিয়ে তৈরি কার্তিক মূর্তি গড়ে দর্শকদের মন কাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে রবীন্দ্রপল্লি উন্নয়ন সমিতি। এবার তাঁদের পুজো ২৩বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। সমিতির অন্যতম কর্তা ঝুলন দত্ত বলেন, দুর্গাপুজোর আনন্দ আমরা এই কার্তিক পুজোয় সুদে আসলে তুলে নিই। প্রতিবছরই নতুনত্ব কিছু করি। এবার ঝিনুক দিয়ে তৈরি প্রতিমা সেরার সম্মান ছিনিয়ে নেবে। পুজোর চারদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান ও যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে। অন্যান্য বছর মণ্ডপ গড়ে পুজো করলেও এবার স্থায়ী মন্দিরে কার্তিক পুজো করেছে সব্জিবাজার কল্যাণ সমিতি। এবার তাঁদের থিম প্রকৃতি বাঁচাও। তাই ফুলের আদলে মণ্ডপ গড়া হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে প্রাকৃতিক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক দেবনাথ দাস বলেন, গাছ থেকে নিজেদের বিপদ ডেকে না আনার বার্তা মণ্ডপসজ্জার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, দুর্গাপুজোর আনন্দ থেকে অনেক দূরে থাকে তারাপীঠবাসী। কারণ তারাপীঠে কোনও দেবী মূর্তির চল নেই। তাই অগ্রহায়ণ মাসে একদিকে নবান্ন উৎসব অন্যদিকে কার্তিক পুজোর আনন্দে এখানকার মানুষ উৎসব মুখর হয়ে ওঠেন। নবান্ন উপলক্ষে তারামাকে নতুন ধানের অন্ন দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। এরপরই মণ্ডপগুলিতে পুজো শুরু হয়। প্রতিটি মণ্ডপে পাত পেড়ে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই চারদিন আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে গোটা সিদ্ধপীঠ।
অন্যদিকে তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত তথা টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, এবছরই প্রথম পূর্বসাগর মোড়ে কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার সমস্ত পুজো কমিটির বিসর্জনের শোভাযাত্রা এই মোড় থেকেই শুরু হবে। ওইদিন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী সহ পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন।