গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে চুলটাও একটা বড় ব্যাপার। কেউ বিভিন্ন স্টাইলে চুল কাটিয়ে, কেউ ‘হাইলাইট’, কেউ বা নানা রঙে চুল রাঙিয়ে, আবার কেউ নিজের নামের প্রথম অক্ষর চুল কাটার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে। অন্যের থেকে নিজেকে আলাদা ‘লুক’ দিতে এখন স্কুলপডুয়াদের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এক-একজনের এক-একরকম চুলের স্টাইল। দিনের পর দিন চুলের হরেকরকম স্টাইল নিয়ে স্কুলে আসা পডুয়ার সংখ্যা বেড়েই চলছিল। স্কুলের শৃঙ্খলা ও পরিবেশের পরিপন্থি মনে করে পড়ুয়াদের সতর্কও করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু, তাতে প্রবণতা কমে যাওয়ার বদলে বেড়েই চলছিল। এমনকী অভিভাবকদের মিটিং করে জানিয়েও এতে রাশ টানা যায়নি। অবশেষে প্রধান শিক্ষক হাতে কাঁচি তুলে নেন।
সোমবার স্কুলে প্রার্থনার লাইনে এমনই কিছু পড়ুয়ার চুলে বিভিন্নরকম রং ও স্টাইলিস কাটিং দেখে তিনি নিজের রুমে ডেকে কাঁচি দিয়ে সেই চুল কেটে দেন। চুল কাটার সেই ভিডিওতে প্রধান শিক্ষককে রসিকতা করতেও দেখা গিয়েছে। তিনি বলছেন, ‘বাপরে চুলের কী সাইজ, কী স্টাইল। চুলে আবার অক্ষর লেখাও আছে! আমি তো অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা সেলুন খুলব’। যা শুনে পাশে অন্যান্য ছাত্ররা হেসে ওঠে। প্রধান শিক্ষক বলছেন, যদি তোর মা-বাবা কাঁদে, তাহলে বলবি হেডমাস্টার স্কুলে ডেকেছেন। মঙ্গলবারও সেই একই অভিযান চালালেন তিনি। তবে এবড়ো-খেবড়ো নয়, পডুয়াদের যাতে দেখতে খারাপ না লাগে সেইমতোই তিনি চুল কেটেছেন।
স্কুল শিক্ষকদের একাংশ বলেন, অভিভাবকরা কী করে এধরনের চুল কাটার অনুমতি দেন। বাচ্চারা তো নিজের মনের মতো করে চলা বা অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করবেই। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। এতে স্কুলের অন্যান্য পডুয়াদের মধ্যে খারাপ প্রভাব পড়ে। সহকারী শিক্ষক অরূপতরন পাল বলেন, প্রধান শিক্ষক এভাবে চুল কেটে ছাত্র সমাজে ভালো বার্তা দিয়েছেন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মার্জিত ছাত্রসুলভ, সভ্য দর্শনই আমরা চাইছি।
প্রধান শিক্ষক বলেন, চুলের স্টাইল বা রং করার প্রবণতা ছাত্রদের মধ্যে বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদের এব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে ছাত্রসুলভভাবে চুল কেটে স্কুলে আসে। আমি মনে করি এধরনের চুলের স্টাইল বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও পরিবেশের পরিপন্থি। এখনই রোধ করা না গেলে সংক্রামক ব্যাধির মতো অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে। তাই আমি নিজে হাতে কাঁচি নিয়ে সুন্দর করে চুল ছেঁটে দিয়েছি। সোমবার এরকমই পাঁচ ছাত্রের স্কুল কেটে অভিযান শুরু করেছি। এদিনও একজনের কাটা হয়েছে। আরও কয়েকজন পডুয়ার চুল রং করা রয়েছে। তারা এটা দেখে সতর্ক না হলে এই অভিযান চলবে। প্রধান শিক্ষকের দাবি, তাঁর এই কাজকর্মে খুশি অভিভাবকরা। কারণ, তাঁদের কথায় কান দেয় না পডুয়ারা। ছাত্রদের মধ্যেও কোনও ক্ষোভ নেই। কারণ, তাঁরা ভালো করেই বুঝেছেন স্যার যেটা করেছেন আমাদের ভালোর জন্যই করেছেন। তিনি বলেন, যারাই এভাবে রং করে স্কুলে আসবে তাদের চুল এভাবেই ছেঁটে দেব।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সন্তু ও কৃষ্ণ মাল বলেন, হিরো সাজার জন্য স্টাইল করে চুল কেটে রং করেছিলাম। কিন্তু হেডস্যার সেই চুল কেটে দিয়েছেন। একটু খারাপ লাগলেও তিনি আমাদের ভালোর জন্যই করেছেন। আর কোনওদিন চুলে রং করব না।
অভিভাবক সুরজ মাল, সাবিনা বেওয়া বলেন, আমরা দিনমজুরের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। ঠিকমতো খেয়াল দিতে পারি না। তবে প্রধান শিক্ষক বলার পর আমরা ছেলেদের ভদ্রভাবে চুল কাটার কথা বলেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। তাই আমরা যেটা চেষ্টা করেও পারিনি, সেটাই করে দেখালেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করছি। সব স্কুলকেই এই পদপেক্ষ অনুসরণ করা উচিত।