বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
প্রসঙ্গত, শনিবার ভোরে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং হস্টেলে মেধাবী নার্সিং ছাত্রী সমাপ্তি রুইদাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতার পরিবারের দাবি, সমাপ্তিকে খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষের মানবিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাজপুর গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের মহিলাদের একাংশ বলেন, ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ একবারের জন্য ফোন করে খোঁজ নেয়নি মৃতার পরিবারের। এমনকী কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর দেহ আনার জন্য মর্গ কর্তৃপক্ষ মৃতার বাবার কাছ থেকে ২০০০টাকা দাবি করে। সমাপ্তির প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন, ও যেখানে পড়তে গিয়েছিল সেই কলেজের শিক্ষিকাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই। নার্স হওয়ার স্বপ্নে যে মেয়েটা কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিল, তার কয়েক মাসের মধ্যেই বাড়িতে ফিরল নিথর দেহ।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে শোকাহত মৃত ছাত্রীর বাবা ও মা দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামে। সমাপ্তির মা বুলাদেবী বলেন, মেয়েকে প্রথম যেদিন নার্সিং কলেজের হস্টেলে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম ওইদিন আমাকে হস্টেলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মেয়েটা কোথায় থাকত, কীভাবে থাকত। তা আর চোখের দেখা হল না।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা ছিল সমাপ্তির প্রিয় বন্ধু। তাই বাবার সঙ্গে সব বিষয়ে তিনি খোলামেলা ভাবে আলোচনা করতে ভালোবাসতেন। পুজোর ছুটিতে বাড়ি আসার সময় সমাপ্তির ব্যাগ গোছানো দেখে নার্সিং হস্টেলের এক দিদিমণি বলেছিল, ‘যদি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে একবারে বাড়ি চলে যেতে হয়, তা হলে বাবাকে বলবে ৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে রাখতে। তুমি যে আসনে ভর্তি হয়েছ সেই আসনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই টাকা দিতে হবে।’ পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে এই কথা বাবাকে জানিয়েছিলেন সমাপ্তি।
সমাপ্তির বাবা সুকুমার রুইদাস বলেন, মেয়ে বারবার করে বলত, বাবা এত টাকা তুমি কোথায় পাবে? তাই মেয়ে যদি নার্সিং পড়া কোনও কারণে ছেড়ে দেয়, তবে ওই পাঁচ লক্ষ টাকা আমি কোথা থেকে জোগাড় করব। এই ভাবনা সব সময় ওর মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করত। এছাড়াও ওখানে ভর্তির পর মাত্র কয়েক মাসে বই ও পোশাক বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা আমার খরচ হয়েছে। তবুও মেয়েকে কখনও কীভাবে কষ্ট করে টাকা জোগাড় করছি, সেকথা বুঝতে দিতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম ও আর পাঁচটা মেয়ের মতোই স্বাভাবিক ভাবে নিজের পড়াশোনা শেষ করুক। কিন্তু, তা আর হল না।
এদিকে, সমাপ্তিও চেয়েছিলেন নার্সিং শেষ করে সরকারি চাকরি করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে বাবার পাশে দাঁড়াতে। তাজপুর রামচরণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছিলেন সমাপ্তি। এরপর কামারপুকুর কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে তিনি ভর্তি হন। যদিও প্রথম থেকেই ভূগোল নিয়ে পড়বার তাঁর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, বাবার আর্থিক অবস্থার কথা ভেবেই তিনি বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এরই মধ্যে নার্সিংয়ের ফর্মফিলআপ করে কলকাতার সরকারি কলেজে নার্সিং পড়ার সুযোগ পান। যে কারণে কামারপুকুর কলেজ তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
সমাপ্তির ছোটবেলার সহপাঠীরা বলেন, যদি কামারপুকুর কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ও পড়াশোনা করত তাহলে হয়তো আজও আমাদের মধ্যেই থাকত সমাপ্তি। ঘটনার পর থেকে তাজপুর এলাকা এখনও শোকস্তব্ধ।