পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
প্রসঙ্গত, ঘোষণামতো গত শুক্রবার থেকে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে বিধানসভাভিত্তিক বুথ সম্মেলন শুরু করেছেন। পুরন্দরপুর, সাঁইথিয়ার পর এদিন দুবরাজপুর বিধানসভা নিয়ে সম্মেলন করা হয়। দুবরাজপুরের স্টেডিয়ামে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ব্লক, শহর সহ খয়রাশোলের বুথগুলিকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাতে প্রত্যেক বুথের চারজন মহিলা ও ছ’জন করে পুরুষকর্মী ছিলেন।
এদিন অনুব্রতবাবুর পাশাপাশি ছিলেন দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, মলয় মুখোপাধ্যায়, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী প্রমুখ। সম্মেলনে অনুব্রতবাবু ও অভিজিৎবাবু পৃথক অঞ্চলের সভাপতিদের মঞ্চের সামনে ডেকে নানা প্রশ্ন করেন। খয়রাশোল ব্লকের অঞ্চলস্তরের নেতাদের প্রথমে ডাকা হয়। বাবুইজোড় অঞ্চল নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাঝেই অনুব্রতবাবু আক্ষেপের সুরে বলেন, খয়রাশোলের মানুষের দোষ নেই। যত দোষ আমাদের। আমরা শুধু সেখানে নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করেছি। অনেকেই মারা গিয়েছেন। সেখানে কি আরও মানুষ মরবে? এমনভাবেই খয়রাশোলের নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন জেলা সভাপতি।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে দুবরাজপুর বিধানসভার বহু বুথে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে। সেখানে অস্বাভাবিকভাবে বিজেপির ভোট বেড়েছে। খয়রাশোলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়েছে। তাই এদিন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চর্চা করতে গিয়ে জেলা সভাপতি এমনভাবেই আক্ষেপ করেছেন। তবে, খয়রাশোলের স্থানীয় নেতারাও একাধিক বিষয়ে সর্বসমক্ষে বলেছেন। যা নিয়ে দলের অন্দরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বাবুইজোড় অঞ্চলের এক নেতা বলেন, সেখানে গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় যাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে তাঁদের বেশিরভাগের কোনও জনভিত্তি নেই। গোটা গ্রাম ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়েছে। তাই তার প্রভাব লোকসভা ভোটে গিয়ে পড়েছে। এমনকী, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ থেকেও বহু ভোটার তৃণমূলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, এমন অভিযোগও করেছেন খয়রাশোল অঞ্চলের এক নেতা।
তবে, এদিনের সম্মেলনে খয়রাশোলের হজরতপুর অঞ্চলের নেতৃত্বকে ডাকা হয়। সেখানকার তিন নেতা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন। এক্ষেত্রে কেউ বলেছেন, ১০০দিনের কাজ করেও শ্রমিকরা অনেকেই টাকা পাননি। আবার আবাস যোজনা থেকেও কাটমানি নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেইসময় অনুব্রতবাবু তাঁদের বলেন, আপনারা টাকা তুলছেন না দল করছেন? সেই প্রসঙ্গেই জেলা সভাপতি কড়া ভাষায় নির্দেশ দেন, কেউ টাকা চাইলে থানায় এফআইআর করুন। অন্যদিকে, জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে ওই এলাকার নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। সেইমতো থানায় অভিযোগ দায়ের করারও নির্দেশ দেন। এমনকী, জালনোটের মামলায় জড়িয়ে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।
এছাড়া এদিন খোদ সভাধিপতিও বলেন, দিদিকে বলো কর্মসূচিতে গিয়ে তাঁকে এলাকার বহু মানুষ লিখিতভাবে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। সেইসব অভিযোগ নিয়ে সভাধিপতি এদিন নাকরাকোন্দার নেতৃত্বকে প্রশ্ন করেন।
তবে, এদিন সম্মেলনে অনুব্রতবাবু একাধিক অঞ্চলে পাঁচজনের কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খয়রাশোল অঞ্চলের ক্ষেত্রে বলেছেন, সেখানে দল চালানোর জন্য পাঁচজনের কমিটি থাকবে। পাশাপাশি পঞ্চায়েতের কাজকর্ম চালানোর জন্যও পাঁচজনের কমিটি গড়ার কথা বলেছেন। পৃথক কমিটিগুলি অন্যের কাজ যেন না দেখে সেব্যাপারেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অন্যদিকে, এদিন দুবরাজপুর ব্লকেরও একাধিক অঞ্চলে ভোটের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। দলের অঞ্চল সভাপতিরা লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের কারণ বলতে গিয়ে বলেছেন, বামেদের ভোট বিজেপিতে সুইং করেছে বলেই এই হাল হয়েছে। অভিজিৎবাবু সেইসব অঞ্চলের বুথভিত্তিক ফলাফল জানিয়ে বাম ভোটারদের দলে টানার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুব্রতবাবুও সেই প্রসঙ্গে সম্মতি জানিয়েছেন। এছাড়া দুবরাজপুর পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা শহর সভাপতি পীযূষ পাণ্ডেকেও তোপ দেগেছেন অনুব্রতবাবু। তিনি আগামী পুরসভা নির্বাচনে দলের ভোটের ব্যবধান বাড়ানোর নির্দেশ দেন। তবে, পীযূষবাবু দুবরাজপুরে পৃথক দমকল কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো ভালো করার দাবি জানিয়েছেন। সেবিষয়ে অনুব্রতবাবু তা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে সম্মেলনে কর্মীরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।