কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার রাত প্রায় ১০টা নাগাদ বাড়িতে ফোন করেছিলেন সমাপ্তি। মৃত ছাত্রীর বাবা সুকুমার রুইদাস বলেন, আমার মেয়ে কোনওভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। হস্টেলের কেউ ওকে প্রাণে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে। শনিবার সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ফোন করে আমাকে বিষয়টি জানানোর পর আমি কলকাতায় ছুটে যাই। কিন্তু, আশ্চর্যজনক ভাবে আমি পৌঁছনোর আগেই, ওরা মেয়ের ময়নাতদন্ত শেষ করে ফেলে। হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ মেয়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমাকে কোনওরকমভাবে কিছু বলতে চায়নি। শুধু বারবার করে আমাকে বলা হয়েছে ও আত্মহত্যা করেছে।
ওইদিন ছাত্রীর দেহ বাড়িতে আসতেই তাঁর পরিজনরা লক্ষ্য করেন, তাঁর বাঁ হাতের তালুতে নীল কালিতে লেখা রয়েছে, ‘আমার বালিশের তলায় খাতার ফোল্ড করা পাতায় লেখা আছে’। এই লেখা দেখে প্রাথমিক ভাবে সুইসাইড নোটের কথা উঠে এলেও কার্যত তা মানতে চায়নি ছাত্রীর পরিবার। এমনকী কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই খাতার সম্পর্কেও কিছুই জানাতে চায়নি বলে অভিযোগ।
পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সমাপ্তির হাতে নীল কালিতে লেখা অক্ষর কখনই ওর নিজের হাতের লেখা হতে পারে না। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মধুসূদন বৈরাগী বলেন, পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তাজপুর রাম চরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলেই পড়াশোনা করেছে সমাপ্তি। ওর হাতের লেখা আমি চিনি। কিন্তু, মৃত্যুর আগে ওর হাতে লেখা যে সুইসাইড নোটের কথা বলা হচ্ছে। তা কখনই সমাপ্তির নিজের লেখা নয়।
তারপর থেকেই নার্সিং ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। পাশাপাশি সিনিয়র রুমমেটদের দ্বারা বিভিন্ন সময় সমাপ্তিকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনও হতে হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। এই নির্যাতনের কথা সমাপ্তি তাঁর ছোট বেলার স্কুলের বান্ধবী লাবণী রুইদাসকে পুজোর ছুটিতে এসে খোলামেলা ভাবে জানিয়েছিলেন। লাবণী বলেন, ওই হস্টেলে সিনিয়রদের দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতনের কথা সমাপ্তি আমাকে বলেছে। বিশেষ করে, বেশি রাত পর্যন্ত হস্টেলে আলো জ্বালিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আপত্তি জানাত ওর রুমমেটরা। এমনকী সিনিয়র দিদিরা ওকে পড়া জিজ্ঞাসা করত। ও পড়া বলতে না পারলে, পাঁচতলা ভবনের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে বেশ কয়েকবার ওঠানামা করতে বাধ্য করত।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১ অক্টোবর কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্লাস শুরু হয়েছিল সমাপ্তির। তারপর কয়েক দিনের মধ্যেই পুজোর ছুটিতে তিনি বাড়ি ফেরেন। পরে লক্ষ্মী পুজোর দু’দিন পর আবারও কলকাতায় ফিরে যান সমাপ্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে হিসেবে পরিচিত ছিলেন সমাপ্তি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের বড় সমাপ্তি। তাঁর বাবা সুকুমারবাবু পেশায় রংমিস্ত্রি। তাঁর একার রোজগারে পাঁচজনের সংসার চালানো কষ্টের ছিল। তবুও মাটির দো-চালা ঘরে থেকে তিনি ছেলে, মেয়েদের পড়াশোনায় কোনও খামতি রাখেননি। সমাপ্তিও চেয়েছিল সরকারি সুযোগে নার্সিং পড়া শেষ করে, চাকরি করবেন। নিজে টাকা উপার্জন করে বাবার পাশে দাঁড়াবেন।
রবিবার মৃতার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের ভিড়। মেয়ের মৃত্যুর শোকে দফায়-দফায় জ্ঞান হারাচ্ছিলেন সমাপ্তির মা বুলাদেবী। তিনি বলেন, মেয়ে চেয়েছিল সরকারি জায়গা থেকে নার্সিং পাশ করে চাকরি করতে। যে কারণে আমরা এই প্রথমবার ওকে বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে সম্মতি দিয়েছিলাম। কিন্তু, ওই নার্সিং পড়তে গিয়েই ওর জীবনটা শেষ হয়ে গেল।
এদিন কোতুলপুরের তাজপুর গ্রামেও ছিল শোকের পরিবেশ। চলতি ইংরেজি বছরে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করা সমাপ্তি ছিলেন গ্রামের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষকদের গর্ব। কিন্তু, তাঁর জীবনের সমাপ্তিতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা।