কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, কৃষিতে ৫৮৫কোটি ৩০লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষিদপ্তর একটি রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। মোট ১১হাজার ৪১৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ২৮২৯টি পুরোপুরি এবং ৮৫৮৭আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথি মহকুমার অন্তর্গত কাঁথি-১ ও ৩, দেশপ্রাণ, খেজুরি-১ ও ২ এবং ভগবানপুর-২ ব্লকের বেশিরভাগ কৃষি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও নন্দীগ্রাম-১ ও ২ এবং এগরা মহকুমার বেশকিছু জায়গায় চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবছর পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট আড়াই লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ৪০হাজার হেক্টর জমিতে ১০০শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষিদপ্তরের অফিসারদের দাবি। এছাড়াও ৩৩শতাংশের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১লক্ষ ২৫হাজার হেক্টর জমিতে। আমন জমির পাশাপাশি সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পান বরজ, ফুলচাষ এবং সব্জিচাষ। বুলবুল ঝড়ের পরই জেলাজুড়ে সব্জির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কীভাবে মিড-ডে মিল চালানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক স্কুলের শিক্ষকরা।
কৃষিদপ্তরের উপ অধিকর্তা(প্রশাসন) বলেন, বুলবুল ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির একটা প্রাথমিক রিপোর্ট ব্লক থেকে চাওয়া হয়েছিল। তাতে মোট ৫৮৫কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এসেছে। আমরা ওই রিপোর্ট রাজ্যে পাঠিয়েছি। ১৪ নভেম্বরের মধ্যে মৌজাভিত্তিক রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। আমন চাষে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০০ শতাংশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও পান, সব্জি এবং ফুলচাষে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এসেছে। সেইমতো রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।
বুলবুল ঝড়ের দাপটে বেশিরভাগ জায়গায় ধানগাছ শুয়ে পড়েছে। তার উপর জল জমে গিয়েছে। মাঠজুড়ে আধপাকা ধানে মই চালানোর মতো ছবি। শনিবার রাতে বুলবুলের তাণ্ডবের পর রবিবার সকালে মাঠে গিয়ে চাষিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কারণ, ধানগাছের উপর জল জমে যাওয়ায় ধান পচে নষ্ট হয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ক্ষতিপূরণের আশায় রয়েছেন। জেলার নন্দকুমার, চণ্ডীপুর এবং ময়না ব্লকেও অনেক জায়গায় আমনচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুলবুল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমন, পান, ফুল ও সব্জিচাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং বিমার আওতায় চাষিদের বিমা দেওয়ার দাবি সহ পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার এসইউসির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) সুদীপ সরকারের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, বুলবুল ঝড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কৃষিক্ষেত্রে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি চাষিকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে বুলবুলের পর সব্জির দাম কার্যত আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় জেলায় স্কুলগুলিতে কীভাবে মিড-ডে মিল চলবে, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। নন্দকুমার ব্লকের আলাশুলি গোরাচাঁদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার ভৌমিক বলেন, সব্জি মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছে। কীভাবে মিড-ডে মিল চলবে বুঝতে পারছি না।
আমন চাষের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কৃষি-অর্থনীতিতে পান, সব্জি এবং ফুলচাষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কয়েক লক্ষ চাষি কৃষির উপর নির্ভর করে থাকেন। পটাশপুরের বড়হাট গ্রামের চাষি প্রেমচাঁদ ঘড়া, জনার্দন ঘড়া বলেন, আর কয়েকটা দিন পরই খামারে ধান উঠে আসত। তার আগে বুলবুল ঝড় এসে সব শেষ করে দিয়েছে। এখন আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে বুলবুল। আশা করি, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।