বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বাঁকুড়া কৃষি দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেই এরাজ্যে শস্যবিমা চালু হলেও বাঁকুড়া জেলায় সেভাবে চাষিদের বিমার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না। ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে দপ্তরের প্রচেষ্টায় দেড়শোর বেশি চাষিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৫৩ হাজার ৮৫২ জন চাষি ফসল মার খাওয়ায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। গত বছরে ব্যাপক সংখ্যক চাষি ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় এবার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক চাষি বিমার আওতাভুক্ত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার জন্য কখনও অতিবৃষ্টি, আবার কখনও অনাবৃষ্টির কারণে অনেক সময় চাষিদের ফসল নষ্ট হয়। তাই চাষিদের লোকসান থেকে রক্ষা করতে রাজ্য সরকার বেশ কয়েক বছর আগেই শস্যবিমা প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পে সরকারই বিমার ব্যয়ভার বহন করে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে জেলা প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালে বাঁকুড়া জেলায় মোট ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৩৩ জন চাষিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনে জেলা কৃষি দপ্তর। যারমধ্যে ৬০ হাজার ৮৪৫ জন ঋণ নেওয়া ও ৯২ হাজার ২৮৮ জন লোন না নেওয়া চাষিকে এই বিমার আওতায় আনে। বৃষ্টির সমস্যার জন্য ফসল মার খাওয়ায় ওই চাষিদের একটা বড় অংশ ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ হাজার ৮৫২ জন চাষি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হন। যার মধ্যে ৪২ হাজার ৪৯৬ জন চাষিকে ইতিমধ্যেই কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে ৩২ কোটি ১৪ লক্ষ ১২ হাজার ৬৪৬ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি চাষিদেরও খুব শীঘ্রই তাঁদের প্রাপ্য টাকা তুলে দেবে কৃষি দপ্তর।
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ছাতনা ব্লকের ৮ হাজার ৩৭৩ জন, বড়জোড়ায় ৫ হাজার ৪১২ জন, ইন্দপুরের ৪ হাজার ২৭৮ জন, সিমলাপালের ৪ হাজার ১৭৩ জন, শালতোড়ার ৩ হাজার ৬৫২ জন, সোনামুখী ৩ হাজার ২৩৯ জন, ওন্দা ব্লকের ৩ হাজার ১০১ জন, খাতড়া ২ হাজার ৮৩৬ জন চাষি ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন। গত বছর চাষের ক্ষতির পর টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতেই এবার ব্যাপক সংখ্যায় চাষিরা বিমা পাওয়ার জন্য নিজেদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।
কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজারের কাছাকাছি কৃষক পরিবার রয়েছে। যার মধ্যে এবার ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৬৮ জন চাষি নিজেদের ফসলের বিমা করিয়েছেন। এরমধ্যে ৭৭ হাজার ২১৮ জন ঋণ নেওয়া চাষি ও ২ লক্ষ ২০ হাজার ৫০ জন লোন না নেওয়া চাষি ফসল বিমা করিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, চাষে ক্ষতি হলে শস্যবিমা থাকায় চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন দেখে বহু চাষি এবার বিমা করার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও কৃষি দপ্তরও চাষিদের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিশেষ ক্যাম্প করে চাষিদের বিমা করিয়েছে। তাই এত কম সময়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে বিমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
ওন্দার চাষি জয়দেব সরকার বলেন, গত বছর আমি ব্লক কৃষি দপ্তর থেকে আমনে ফসল বিমা করিয়েছিলাম। শেষের দিকে বৃষ্টির অভাবে সেচ দিতে না পারায় ফলন ব্যাপক মার খায়। তাই ক্ষতিপূরণের জন্য কৃষি দপ্তরের কাছে আবেদন করি। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছে। তাই আমি আশেপাশের সমস্ত চাষিকে এই বিমা করানোর পরামর্শ দিই। এবারও প্রথমে অনাবৃষ্টির জেরে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে। তাই এবারও ক্ষতিপূরণ মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।