গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
এদিন মাইকিং করে বলা হয়, আগামী ৪৮ঘণ্টার মধ্যে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দীঘা সহ জেলার সমুদ্রউপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। যাঁরা সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য এখনও রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি ঘোরালো হলে কিংবা সমুদ্র আরও উত্তাল হলে একইভাবে পর্যটকদের সমুদ্রস্নান তো দূরের কথা, সমুদ্রের ধারেও যাওয়া যাবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তাই পর্যটকদের নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করতে হবে। এদিকে সতর্কতা জারি হওয়ার পর থেকে পর্যটকদের অনেকেই দীঘা ছাড়তে শুরু করেছেন। যাঁরা সপ্তাহ শেষে শনিবার ও রবিবার দীঘা আসবেন বলে বুকিং করেছিলেন, তাঁরা বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন বলে দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে এমন কিছু পর্যটক রয়েছেন, যাঁরা উদ্ভুত পরিস্থিতি উপভোগ করার জন্য সপ্তাহান্তে দীঘায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সতর্কবার্তা জারি হওয়ার পরও বৃহস্পতিবার বহু পর্যটক ওল্ড ও নিউ দীঘায় সমুদ্রস্নান সেরেছেন। তবে, কাউকেই হাঁটুজলের বেশি নামতেই দেওয়া হয়নি। এদিকে কাঁথির উপকূলে দীঘা ছাড়াও মন্দারমণি কোস্টাল ও জুনপুট কোস্টাল থানার উদ্যোগে একইভাবে মাইকিং করা হয়েছে।
দীঘা থানার ওসি বাসুকিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীঘা কোস্টাল থানার ওসি সঞ্জয় মাইতি বলেন, পুলিস-প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদিন সকাল থেকে মাইকিং করা হয়েছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে পুলিস-প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেও যদি সমুদ্র উত্তাল থাকে, তাহলে কাউকেই স্নানে নামতে দেওয়া হবে না।
দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, আমরা খবর নিয়ে দেখেছি, সতর্কতা জারি হওয়ার পর একটি বড় অংশের পর্যটক দীঘা ছাড়তে শুরু করেছেন। আবার যাঁরা সপ্তাহান্তে দীঘা আসবেন বলে বুকিং করেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই বুকিং ক্যানসেল করে দিয়েছেন। প্রকৃতির মারকে তো মেনে নিতেই হবে। তবে, দিনকয়েকের মধ্যে আবহাওয়ার উন্নতি হবে এবং পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশাবাদী।
দীঘার সৈকতে দাঁড়িয়ে সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। হাওড়ার শিবপুর এলাকা থেকে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলেন পিয়ালি রায়। তিনি বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার থেকে দীঘায় এসেছি। এখানে ভালোই উপভোগ করেছি। কিন্তু, নিম্নচাপের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় সহ সমুদ্র উত্তাল হবে বলে শুনলাম। তাই একটু হলেও ভয় তো হচ্ছেই। সেই কারণে আমরা বিকেলেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আবার কলকাতার কেষ্টপুরের প্রফুল্ল কানন থেকে আসা যুবক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গেল দুর্যোগকে প্রত্যক্ষ করার ইচ্ছা। বন্ধুবান্ধব নিয়ে দীঘায় বেড়াতে এসেছেন মলয়বাবু। তিনি বলেন, প্রশাসনের সতর্কবার্তা শুনেছি। মাইকিং সহ প্রশাসনিক তৎপরতা দেখে ভালো লাগল। উদ্বেগ সামান্য লাগছে ঠিকই। তবে আমরা ওই সময়টা দীঘা ছাড়ব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় যদি আসেও, আমরা দীঘায় থেকে তা উপভোগ করব। দেখাই যাক না কী হয়?
সংশ্লিষ্ট রামনগর-১ বিডিও আশিস রায় বলেন, আমরা পুরো সমুদ্র উপকূলজুড়ে সতর্কতা জারি রেখেছি। উপকূলীয় এলাকার ওসি ও জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, সাইক্লোন সেন্টারগুলিকে প্রস্তুত রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এনিয়ে একটি বৈঠকও করা হয়েছে। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করার পাশাপাশি উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে। প্রতি ব্লকেই ত্রাণসামগ্রী মজুত করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে উদ্ধারকারী দল। ব্লক প্রশাসনকে জল, খাবার প্রভৃতি নানা সামগ্রী মজুত ও মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।