ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (ট্রাফিক) অভয়কুমার মহাপাত্র জানান, নাব্যতা সমস্যা মোকাবিলা, পুরনো লকগেটে চাপ কমানো এবং বন্দরে জাহাজের হাইল্যান্ডিং কস্ট কমাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বন্দরের ডক এরিয়ার মধ্যে ৩ নম্বর বার্থের মেকানাইজেশান এবং ডক এলাকার বাইরে নদীতে দু’টি রিভারাইন জেটি নির্মাণ। ৩ নম্বর বার্থের আধুনিকীকরণের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া দ্রুত পণ্য ওঠানো বা নামানোর সুবিধার জন্য ডকের লকগেটের বাইরে আউটার টার্মিনাল-টু নামে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জেটি তৈরি করা হচ্ছে। এবছর ডিসেম্বর নাগাদ জেটির কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হলদিয়া ডক এরিয়া থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শলুকখালিতে ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি বড়মাপের রিভারাইন জেটি তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের কয়েকটি পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হলদিয়া বন্দরের পণ্য পরিবহণ ক্ষমতা আরও ৪০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১২টি মেজর পোর্টের মধ্যে পণ্য পরিবহণক্ষমতা বৃদ্ধির হারে হলদিয়া এখন কোচিন, বিশাখাপত্তনম, পারাদ্বীপের মতো সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ড্রেজিংয়ের গুণগতমান বাড়াতে বন্দরের সঙ্গে ড্রেজিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার চুক্তিতেও পদ্ধতিগত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান জিএম (ট্রাফিক)।
বন্দর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে হলদিয়া বন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন রাখা হয়েছে। গত আর্থিক বছরে ৪৫.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে বন্দর। চলতি বছরে তা আরও ৫ মিলিয়ন টন বাড়াতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিং হয়েছিল ৪০.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ৪-৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন করে পণ্য পরিবহণ বাড়ছে বন্দরে। হলদিয়া বন্দরের লক্ষ্য, আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে বন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বাড়িয়ে ৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন করা। এজন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে।
বন্দরের এক আধিকারিক বলেন, নাব্যতা সমস্যা অতিক্রম করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ স্যান্ডহেডে ট্রান্সলোডিং চালু করার মতো নতুন নতুন পথে ভাবনাচিন্তা করছে। হুগলি নদীর ৭-৮ মিটার গভীরতায় (ড্রাফট) ২০-২৫ হাজার টনের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ হলদিয়ায় ভিড়তে পারছে না। সেজন্য সাগরের কাছে স্যান্ডহেডে ট্রান্সলোডিংয়ের জন্য সমুদ্রে ভাসমান জেটির পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। স্যান্ডহেডে ৫০ মিটার গভীরতায় অনায়াসেই দেড় লক্ষ টনের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ এসে ওই ভাসমান জেটিতে দাঁড়াতে পারে। গত এক বছরে সেখানে ১.৬ লক্ষ টনের ৬টি কেপসাইজ ভেসেল এবং একটি বেবি কেপসাইজ ভেসেল থেকে এক মিলিয়ন টনের বেশি পণ্য খালাস হয়েছে। সেই পণ্য বার্জে চাপিয়ে হলদিয়া বন্দরের এক নম্বর আউটার টার্মিনাল জেটিতে আনা হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লকগেটের উপর চাপ কমাতে বন্দর লাগোয়া নদীর উপর আউটার টার্মিনাল ওয়ানের মতো কয়েকটি জেটি তৈরি হচ্ছে। ট্রান্সলোডিংয়ের পর বার্জে করে জেটিতে যে পণ্য আসছে, তা স্বয়ংক্রিয় কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে বন্দরের ইয়ার্ডে পৌঁছে যায়। একইভাবে লিকুইড কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য আউটার টার্মিনাল টু তৈরি হচ্ছে। জানুয়ারি নাগাদ এটি চালু হলে আরও দু’মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ বাড়বে। শালুকখালিতে হুগলি অয়েল অ্যান্ড গ্যাস টার্মিনাল নামে একটি সংস্থা যে জেটি নির্মাণ করছে, তার ক্ষমতাও প্রায় আড়াই মিলিয়ন টন। অন্যদিকে, ৩ নম্বর বার্থটিকে মেকানাইজড করে র্যা পিড ওয়াগন লোডিং সিস্টেম চালু হবে। এর ফলে জাহাজ থেকে অনেক দ্রুত পণ্য খালাস হলে বেশি সংখ্যক জাহাজ বন্দরে ঢুকতে পারবে। বার্থের কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে দু’মিলিয়ন থেকে চার মিলিয়ন টনে পৌঁছবে।