বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সংসারে আর্থিক অনটন চলায় পরিবারের একমাত্র সন্তান বাসুদেবের ইচ্ছা বিদেশে গিয়ে কিছু উপার্জন করার। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর বাবা কাজ করতে পারেন না। দিনমজুরের কাজ করে ছেলে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। কিন্তু একার উপার্জনে তিনজনের সংসার চালাতে চরম সমস্যা হচ্ছিল। শেষে তিনি ঠিক করেন, সৌদি আরবে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে সংসারের অচলাবস্থা ঘোচাবেন। বিদেশে গিয়ে কিছু মোটা টাকা রোজগার করার তাঁর আশা ছিল।
এরপর বাসুদেব বাবা-মাকে বিষয়টি জানান। প্রথমের দিকে বাবা-মা তাতে রাজি হয়নি। কিন্তু সন্তানের জেদের কাছে নতি স্বীকার করেন তাঁরা। পরিবারের সদস্যরা বলেন, সেইমতো বাসুদেব হাঁসখালির দুই এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে বাসুদেবকে সৌদি আরবে শপিংমলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাতে রাজি হয়ে বাসুদেব নিজেদের দু’কাঠা জমি সহ একচিলতে বাড়ি বন্ধক দেন। বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন। এরপর বন্ধকের টাকা থেকে তিন দফায় প্রায় ৮০ হাজার টাকা এজেন্টের দেওয়া হয় বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। সেই সময় এজেন্টরা বাসুদেবকে সৌদি আরবের শপিং মলে কাজ করে মোটা টাকা মাইনের প্রতিশ্রুতি দেয়। অভিযোগ, এজেন্টের প্রতিশ্রুতি মতো বাসুদেব বিদেশে গেলেও সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা বলেন, সৌদি আরবে গিয়ে বাসুদেব পৌঁছনোর পর তাঁকে শপিং মলে কাজ দেওয়া হয়নি। তার বদলে তাঁকে সেখানকার একটি ছোট কারখানায় কাজ দেওয়া হয়। সেই কারখানায় দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করার পরেও কারখানার মালিকপক্ষ মাইনে দিচ্ছিল না বলে অভিযোগ। উল্টে তাঁর ভিসা ও পাসপোর্ট ফেরত চাইলেও সেটাও আটকে রাখে কারখানার মালিক। পরিবারের দাবি, এমত অবস্থায় কার্যত খেতে না পাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন বাসুদেব। ছেলে বাসুদেব রায় তাঁর মাকে ফোন করে দুর্দশার কথা জানিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। বাসুদেবের মা বলেন, ছেলেকে ফোন করলেই সে শুধু কাঁদছে। তার কান্না আমি মা হয়ে কোনওমতেই মেনে নিতে পারছি না। আপনাদের সকলের কাছে আমার অনুরোধ আমার ছেলেকে যেভাবেই হোক আমার কাছে এনে দিন। এভাবে ছেলে আর আমি কেউ ঠিকভাবে থাকতে পারছি না। অন্যদিকে, বাসুদেবের এক প্রতিবেশী সুপ্রিয়া দাস বলেন, বাসুদেব বাড়ি বন্ধক রেখে বিদেশে গিয়েছেন। এখন সেখানে কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না। এখানে তাঁর বাবা মায়ের অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, এজেন্টের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। বাসুদেবকে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করুক প্রশাসন। ছেলেটা ফিরে না এলে মা-বাবার কী হবে জানি না।
এরপর বাসুদেবের মা কমলা রায় ধানতলা থানায় ও পরে রানাঘাটের এসডিপিও লাল্টু হালদারের কাছে অভিযুক্ত ওই দুই এজেন্টের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি তাঁর ছেলেকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করার আবেদন জানান। অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। রানাঘাট ২ ব্লকের বিডিও খোকন বর্মন বলেন, এখনও পর্যন্ত এই বিষয় আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। আমার কাছে অভিযোগ জানালে আমি এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।