দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
রূপনারায়ণ নদের উত্তরে হাওড়া জেলা এবং দক্ষিণে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা অবস্থিত। মায়াচরের চারটি সংসদ এলাকা রূপনারায়ণের নদীর অপর পাড়ে অবস্থিত। ১৯৭৪সাল নাগাদ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে মায়াচরকে হাওড়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছিল। তখন স্থানীয় বিধায়ক অহীন্দ্র মিশ্র এবং মায়াচরের মানুষজনের আপত্তিতে তা রদ হয়ে গিয়েছিল। ফের ৪৫বছর পর আবারও একবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূখণ্ড মায়াচরকে হাওড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। আর তাকে ঘিরেই উত্তাল মায়াচর। বৃহস্পতিবার মায়াচর এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিয়ে অমৃতবেড়িয়ায় পার্টি অফিসে একটি বৈঠক হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে চিঠি দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। বৈঠকের পর অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মণিমালা প্রামাণিকের স্বামী তথা অঞ্চল যুব সভাপতি প্রবীর প্রামাণিক বলেন, আমরা মায়াচরকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে রাখার পক্ষে। বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হবে।
মায়াচরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অধিকাংশই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে থাকতে চান। এজন্য ব্লক, মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁরা দরকার করবেন। তবে, মায়াচরবাসীর মুষ্টিমেয় একটা অংশ হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাবকে স্বাগতও জানিয়েছেন। এব্যাপারে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, মায়াচরের চারটি বুথকে হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এনিয়ে প্রস্তাব চেয়ে পাঠিয়েছেন। সেই প্রস্তাব জেলা থেকে পাঠানো হবে।
অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চারটি বুথ পড়ে মায়াচরের মধ্যে। জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। মায়াচরে একটি হাইস্কুল, দু’টি এসএসকে, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, পোস্ট অফিস এবং সমবায় সমিতি রয়েছে। মায়াচরকে হাওড়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে থাকার বিষয়টি জানার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা অংশ ক্ষুব্ধ। পাঁশকুড়ার রানিহাটি হাইস্কুলের সহশিক্ষক সনাতন পড়্যার বাড়ি মায়াচরে। সনাতনবাবু বলেন, হাওড়ার সঙ্গে মায়াচরকে জুড়ে দিলে কোনও সমস্যার সমাধান হবে না। এখানকার ৯৫শতাংশ মানুষ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন। নৌকাডুবির পর ফেরি সার্ভিস বন্ধ। মানুষজন প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। তারপর এরকম একটি সিদ্ধান্ত মায়াচরবাসীর কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের সমান।
মায়াচরের এমআর ডিলার চিত্তরঞ্জন জানা বলেন, ১৯৯৪সাল থেকে মায়াচর-বাড় অমৃতবেড়িয়া ফেরিসার্ভিস চলছে। অথচ দুর্ঘটনার পর পরই এই ফেরিঘাটকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে দিল রাজ্য সরকার। আমরা প্রচণ্ড কষ্টে আছি। এখানকার রোগী তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন ফেরি সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় গেঁওখালি দিয়ে ঘুরিয়ে রোগী নিয়ে যেতে হবে। বাপ-ঠাকুর্দার এই ভূখণ্ড অন্য জেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাবে ভাবলেই কষ্ট হয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। আধার, ভোটার সহ যাবতীয় পরিচত্র সংশোধন করার বাড়তি চাপ কাঁধে চাপবে।
একইভাবে প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য তথা ফেরিঘাটের এক সময়কার মাঝি শত্রুঘ্ন সামন্ত বলেন, মায়াচরকে হাওড়ার সঙ্গে জুড়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, প্রতিনিয়ত দুই পাড়ের মানুষজনকে নিজেদের প্রয়োজনে খেয়া পারাপার করতে হয়। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধপত্র, টিকা সবকিছু মহিষাদল থেকে আনতে হয়। বাড় অমৃতবেড়িয়া এলাকার মানুষজনের জমি আছে মায়াচরে। আবার মায়াচরের অনেকের জমি বাড় অমৃতবেড়িয়ায় আছে। এখন দুই পাড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মানুষজন প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যে আছেন। একই বক্তব্য মায়াচরের শঙ্কর মাইতি, সুশান্ত বাড়, শিবু রায় পারুল আদক ও সন্দীপ আদকদের।
আবার উল্টো সুরও শোনা গিয়েছে মায়াচর থেকেই। মায়াচর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এএনএম মনিকা মণ্ডল বলেন, হাওড়ার সঙ্গে মায়াচরকে জুড়ে দিলে ওষুধপত্র সরবরাহ করার কাজটা সহজ হবে। মায়াচর পশ্চিমপল্লির বংশীধর জানা, ভোলানাথ মাইতি, শুভাশিস মাইতি বলেন, মায়াচরকে হাওড়ার সঙ্গে জুড়ে দিলে ভালোই হবে। এতদিন মায়াচর উপেক্ষিত হয়েছে। আশা করা যায়, তাতে কিছুটা অবস্থার পরিবর্তন হবে।