কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পুলিস জানিয়েছে, সৌভিক জিয়াগঞ্জের খুন হয়ে যাওয়া শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। ২০০৪সাল থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দু’জনে একাধিক ব্যবসাও করেছে। সৌভিকই মৃত শিক্ষককে ব্যবসায় নামিয়েছিল। পুলিস সৌভিককে জেরা করে জানিয়েছে, সে ব্যবসায় পার্টনার করার নামে অনেকের কাছেই টাকা তুলেছিল। বিমা করানোর নামে টাকা নিয়ে তা সে জমা করেনি। পাওনাদাররা ক্রমাগত তার বাড়িতে ভিড় করতে থাকায় সে লুকিয়ে বেড়াত। সে ঘনঘন মোবাইলের নম্বর বদল করত। এমনকী সে একাধিক মোবাইল সেটও ব্যবহার করত। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার কাছে থেকে চারটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। মৃত বন্ধুপ্রকাশ পালও তার কাছে থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা পেতেন। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি বারবার ফোন করতেন। একসময় সৌভিক ফোন ধরা বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি মেসেজ করতেন। এমনকী প্রকাশবাবুর স্ত্রী বিউটি পালও টাকা ফেরতের জন্য এপ্রিল মাসে একাধিকবার মেসেজ করেছেন। তারপরেও সে টাকা ফেরত না দেওয়ায় শিক্ষক দম্পতির সঙ্গে তার সম্পর্কর অবনতি হয়।
পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, সৌভিক বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন মানি মার্কেটিংয়ের নামে টাকা তুলত। অনেককে সে জাল রসিদও দিয়েছে। সাগরদিঘি থানা এলাকার এক ব্যক্তি বিভিন্ন সময় বিমার টাকা হিসেবে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সে নির্দিষ্ট বিমা সংস্থায় টাকা জমা না করে আত্মসাত করে বলে অভিযোগ। পুলিস জেরায় আরও জানতে পেরেছে সম্প্রতি মোবাইলের বিশেষ যন্ত্র অ্যান্টি রেডিয়েশান চিপ বিক্রির নামেও অনেকের কাছে প্রতারণা করেছে। সে ক্রেতাদের বোঝাত, এই চিপ মোবাইলে লাগানো হলে শরীরে ক্ষতি হবে না। প্রতিটি চিপের দাম সে ৯৯৯টাকা করে নিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিস সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আসছে। মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমের বহু বাসিন্দাদের সে প্রতারিত করেছে। তার সঙ্গে প্রতারণা চক্রে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে। তাদের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, প্রায় তিন বছর সৌভিক বহরমপুরেও ছিল। সেসময় সে এই জেলার অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। পরে সে বীরভূম ছেড়ে রামপুরহাটে চলে যায়। সেখান থেকে বীরভূম, বোলপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় কখনও নিজেকে শিক্ষক আবার কখনও কোম্পানির মালিক পরিচয় দিত।
প্রসঙ্গত, জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের পরেই সে পুলিসের র্যা ডারে আসে। তদন্তকারীরা তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে জানতে পারে ঘটনার দিন সে দুর্গাপুরে ছিল। খুনের কথা সে পরে জানতে পারে। ওই ঘটনার সঙ্গে পুলিস তার কোনও লিঙ্ক খুঁজে পায়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সৌভিক অত্যন্ত মিষ্টভাষী। সে কথার ছলে যে কোনও লোকেরই ঘনিষ্ঠ হতে পারত। সে মাঝে মাঝে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার নামে সেমিনার করত। ওই সংস্থায় টাকা বিনিয়োগ করলে উৎসাহীরা কীভাবে লাভবান হতে পারে তা সে ভালোভাবেই বুঝিয়ে বলে টাকা হাতিয়ে নিত। অনেক মহিলার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সে পুলিসকে জেরায় জানিয়েছে, জিয়াগঞ্জের মৃত শিক্ষকের সঙ্গে তার ২০০৪সালের আগে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন তিনি সরকারি চাকরি পাননি। প্রথমে তাঁকে সৌভিক মানি মার্কেটিংয়ের কাজে নামায়। পরে বিভিন্ন বিমা সংস্থার এজেন্সি নেওয়ায়। সম্প্রতি তারা জলের বটলিং প্ল্যান্ট করারও পরিকল্পনা করেছিল। সে জেরায় পুলিসকে জানিয়েছে, সপরিবারে শিক্ষক খুন হওয়ার পর সে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। টাকা না দেওয়ার কারণে তার সঙ্গে শিক্ষক দম্পতির সম্পর্ক সম্প্রতি তিক্ত হওয়ায় অনেকেই তাকে সন্দেহ করতে পারে বলে সে আগেই আন্দাজ করে। সেকারণে ঘটনার পরেই সে নিজেকে অন্তরালে নিয়ে যায়। পুলিসও তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে দেখে ঘটনার দিন সে অন্যত্র ছিল। তবে তার প্রতরণাচক্রে জড়িত থাকার একাধিক প্রমাণ পুলিসের হাতে এসেছে।