বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে শালবনীর প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমি নিয়ে জিন্দাল গোষ্ঠী বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা করেছিল। সেই সময় বলা হয়েছিল, শালবনীর ওই জমিতে মেগা স্টিলের কারখানা তৈরি করা হবে। আর এই কারখানার জন্য তারা প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। তৎকালীন বাম সরকার এই শিল্প সংস্থার বিনিয়োগের উদ্যোগকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে ফলাও করে প্রচার করেছিল। সংস্থার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ের পাশে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটেছিল। যা নিয়ে গোটা রাজ্য রাজনীতি তোলাপাড় হয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনার পর শালবনীর অধিগৃহীত ওই জমিতে স্টিল কারখানার প্রজেক্ট কিছুদিনের জন্য ঠান্ডাঘরে চলে যায়। পরবর্তীকালে সংস্থার পক্ষ থেকে স্টিল কারখানা তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্টিলের উৎপাদনের জন্য আকরিক লোহার প্রয়োজন। সংস্থার কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, ওড়িশা থেকে আকরিক লোহার চাহিদামতো জোগান পাওয়া যাবে। কিন্তু, তা নিয়ে টালবাহনা শুরু হয়। ফলে, সংস্থা স্টিল কারখানা তৈরির উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে যায়। বেশ কয়েক বছর পর ২০১৩ সালে সংস্থার পক্ষ থেকে সেখানে সিমেন্ট কারখানা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালে কারখানাটি সম্পূর্ণ উৎপাদন শুরু করে।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সিমেন্ট কারখানায় হাজার খানেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেখানে বছরে ২.৪ মিলিয়ন টন সিমেন্ট উৎপাদন হয়। কর্মকর্তাদের দাবি, বাজারে তাদের উৎপাদিত সিমেন্টের ভালো চাহিদা রয়েছে। ফলে, আগামী দিনে তারা সিমেন্ট উৎপাদন বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পথে হাঁটছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দিনে এই কারখানা থেকে তারা বছরে ৫ মিলিয়ন টন সিমেন্ট উৎপাদন করবে। ইতিমধ্যেই উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। উৎপাদন দ্বিগুণ করা হলে তাতেও কর্মসংস্থান হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই এলাকায় কয়েক হাজার একর জমি শিল্পের জন্য দেওয়া হয়েছিল। জমিদাতারা চেয়েছিলেন, স্টিলের মেগাপ্ল্যান্ট তৈরি হলে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মতো এখানকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর পরিবর্তন হবে। বহু ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু, বাস্তবে স্টিল কারখানা গড়ে ওঠেনি। সকলের দাবি, আগামী দিনে প্রস্তাবিত জমিতে সংস্থার পক্ষ থেকে ফের স্টিল কারখানা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হোক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক চন্দন বসু বলেন, স্টিলের কারখানা হলে ওই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। আমরা বণিক মহল থেকে সংস্থার কাছে স্টিলের কারখানার বিষয়ে দরবারও করেছিলাম। মন্দার কারণে এখন তারা স্টিলের কারখানা করতে চাইছে না বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে, রঙের কারখানা তৈরির উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা চাই, আরও নতুন নতুন উদ্যোগ তারা গ্রহণ করুক। তাহলে স্থানীয় মানুষজন কাজ পাবেন।
জিন্দাল গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা কৌশিক সেনগুপ্ত বলেন, প্রথম থেকেই প্রস্তাবিত জমিতে স্টিলের কারখানা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ওড়িশা থেকে আকরিক লোহার জোগান নিয়ে টালবাহনা শুরু হওয়ায় আমরা তখন ওই প্রকল্পটি করতে পারিনি। আর এখন স্টিলের বাজার মন্দা। এই অবস্থায় আমরা এখনই ওই কারখানা তৈরির পথে হাঁটছি না। তবে, প্রস্তাবিত জমিতে আগামী দিনে রঙের কারখানা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এনিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আর সিমেন্ট কারখানাতেও উৎপাদন দ্বিগুণ করা হচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, রঙের কারখানা হলে কতজনের কর্মসংস্থান হবে? তিনি বলেন, এখনই ওই কারখানায় বিনিয়োগের পরিমাণ বা কর্মসংস্থান নিয়ে কিছু বলছি না। তবে, কারখানা তৈরি হলে কর্মসংস্থান তো হবেই।