বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
আকুই সয়লা উৎসব কমিটির এক কর্ণধার সুদীপ দে বলেন, সয়লার মূল অনুষ্ঠান এদিন সন্ধ্যাতেই শেষ হলেও উৎসব উপলক্ষে তিনদিন ধরে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় নাড়রা, বোঁয়াইচণ্ডী, গোবিন্দপুর, আদিলপুর, মান্দড়া সহ পার্শ্ববর্তী প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা মেলায় আসেন। সম্প্রীতির ওই উৎসবে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দাস এলাকায় সহেলা স্থানীয় ভাষায় ‘সয়লা’ উৎসবের প্রচলন হয় বহু বছর আগে। তৎকালীন সময়ে এলাকায় বর্ণভেদ প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলন ছিল। তাকে কেন্দ্র করে এলাকায় অশান্তিও ছড়াত। তৎকালীন বর্ধমানের রাজার এক সজ্জন নায়েব এলাকায় খাজনা আদায় করতে এসে তা দেখে খুবই ব্যথিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি এলাকায় বিভিন্ন পুজোয় সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেন। সেই থেকে বর্ধমান সীমানায় বাঁকুড়ার ইন্দাস এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সর্বধর্মের মিলন মেলা আরম্ভ হয়। যার নাম হয় ‘সয়লা’। তবে, এই উৎসব স্থান ভেদে ৪, ৫, ৭, ৯ ও ১২বছর অন্তর হয়। এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ অপেক্ষার পর ওই মেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আকুই গ্রামে পাঁচবছর আগে ‘সয়লা’ বসেছিল। মঙ্গলবার সেখানে পুনরায় ওই উৎসব শুরু হয়েছে। এদিন দুপুর থেকে আকুই হাইস্কুল প্রাঙ্গণে উৎসব শুরু হয়। উৎসবে অংশগ্রহণকারী বাসিন্দারা একে অপরকে মাল্যদান, কপালে সিঁদুর, চন্দনের টিপ, বরণডালা দিয়ে বরণ করে নেন। উৎসব উপলক্ষে মেলাও বসে। এদিন বিকেলে মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। দুপুর থেকে তা রাত পর্যন্ত চলে। তিনদিন ধরে উৎসব প্রাঙ্গণে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
উদ্যোক্তারা বলেন, সয়লার প্রস্তুতি শুরু হয় একমাস আগে থেকে। প্রথা অনুযায়ী গ্রামের সমস্ত দেবদেবীদের মন্দিরে গিয়ে পান, সুপারি ও গোটা হলুদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়। স্থানীয় ভাষায় ওই লোকাচারকে ‘গোয়া চালানো’ বলে। সয়লার দিন আকুই স্কুল সংলগ্ন মনসা মন্দির থেকে শোভাযাত্রা সহকারে দেবদেবী ও তাঁর সহচর সঙ্গীদের আকুই স্কুলমাঠে স্থায়ী মঞ্চে আনা হয় এবং সেখানে বিশেষ পুজো পাঠ করা হয়। তারপর প্রথা অনুযায়ী উৎসব শুরু হয়। সয়লা উৎসবের মূল বৈশিষ্ট্য হল সর্বধর্ম মিলন। তাই আকুইয়ের সয়লা উৎসবে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।
স্থানীয় বোঁয়াইচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা এক কলেজছাত্রী সুমনা রক্ষিত বলেন, আমি এবারই প্রথম আকুইয়ে সয়লা দেখতে এসেছি। এদিন নতুন নতুন অনেক বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী একে অপরকে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়ে সই পাতিয়েছি। একদিনের আলাপেই তাঁদের সঙ্গে গভীর সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ওদেরকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার নিমন্ত্রণও করেছি।