সংবাদদাতা, রানাঘাট: নিরাপত্তার দাবিতে মঙ্গলবার শান্তিপুর থানায় বিক্ষোভ দেখালেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পুরোহিতরা। শান্তিপুরে পুরোহিত খুনের ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হন তাঁরা। নিরাপত্তার দাবিতে শান্তিপুর শহরে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন। তারপর তাঁরা থানায় ডেপুটেশন জমা দেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের নদীয়া জেলা শাখার পক্ষ থেকে এদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েকশো ব্রাহ্মণ যোগদান করেন। পুরোহিতরা বলেন, এই খুনের ঘটনায় কোনও নির্দোষ ব্যক্তি যেন সাজা না পায় সেদিকটা প্রশাসনকে দেখতে হবে। ঘটনায় জড়িতরা প্রভাবশালী। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে তারা প্রভাব বিস্তার করে প্রমাণ লোপাট করতে পারে। এতে উপযুক্ত দোষীরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। পুলিসকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিন দুপুরে প্রথমে তাঁরা শান্তিপুর স্টেশন থেকে মিছিল শুরু করেন। সেই মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শহরের বিভিন্ন রাস্তা অতিক্রম করে থানায় আসে। সেখানে পৌঁছে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল শান্তিপুর থানার ওসির কাছে ডেপুটেশন জমা দেন। এদিনের মিছিলে অংশ নেন দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়া পুরোহিত সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই নাবালিকা মেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা। মিছিলে পা মিলিয়ে সুপ্রিয়বাবুর ভাইপো রণব্রত বন্দোপাধ্যায় বলেন, ব্রাহ্মণ সমাজ রাস্তায় নেমেছে। কাকাকে যারা মেরেছে তারা যেন কঠোর শাস্তি পায়। পাশাপাশি ব্রাহ্মণদের নিরাপত্তার দাবিও আমরা রাখছি। নবমীর পুজো করার পর এমন ঘটনা ঘটে গেল যে সে দশমী পুজোটাও করতে পারল না। দোষীদের কঠোর শাস্তি না হলে এমন ঘটনা অন্যদের সঙ্গেও ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার দাবি আমরা রাখছি।
অন্যদিকে, সংগঠনের এক সদস্য তাহেরপুরের বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র রায় বলেন, সুপ্রিয়বাবুকে যারা খুন করেছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি রাখছি আমরা। এরসঙ্গে ব্রাহ্মণদের নিরাপত্তার দাবিও জানাচ্ছি। এধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। সংগঠনের সম্পাদক তপন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে দোষীদের বিচার চাইছি।
প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগে শান্তিপুর থানার বাগআঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগদেবীতলা এলাকায় সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়(৪২) ওরফে ভোম্বল নামে ওই পুরোহিতের দেহ স্থানীয় জলাশয়ে ভেসে ওঠে। ওই ব্যক্তি নবমীর রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। স্থানীয় লক্ষ্মীনাথপুর এলাকার একটি মাঠ থেকে সুপ্রিয়বাবুর স্কুটার উদ্ধার হয়। তিনি স্থানীয় একটি মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন। সেই মন্দিরের পিছনের একটি জলাশয় থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা বলেন, সুপ্রিয়বাবু নবমীর রাতে পুজো শেষে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর একটি জলাশয়ে তাঁর মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার শান্তিপুর বাগআঁচড়া রাজ্য সড়ক স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের ডাল ফেলে ঘণ্টা তিনেক অবরোধ করেন। পুলিস গেলে তাদের ঘিরে ধরে চলে বিক্ষোভ। পুলিস জলাশয় থেকে দেহ তুলতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়। ঘটনার পর শান্তিপুর থানার পুলিস তদন্তে নেমে স্বপন প্রামাণিক, তরুণ মণ্ডল ও সুব্রত ধারা নামে তিনজনকে ওই রাতেই গ্রেপ্তার করে।