পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
দীপাবলির রাতে একসময় মাটির প্রদীপই রাঙিয়ে দিত বাঙালির তুলসিতলা, উঠোন থেকে শুরু ছাদ, কার্নিস, চিলেকোঠা। গত কয়েক বছরে মাটির প্রদীপের সেই জায়গা ছিনিয়ে নিয়ে দাপট দেখিয়েছে টুনি, এলইডি, রকমারি চায়না লাইট। তুলসিতলা, ধানের গোলা, বাড়ির উঠোনেই সীমাবদ্ধ থেকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল মাটির প্রদীপ। দুপুরে বাড়ির লম্বা বারন্দায় রোদে পিঠ দিয়ে বসে ঠাকুমা, দিদাদের সলতে পাকানোর দিনও হারিয়ে গিয়েছিল। মৃৎশিল্পীদের দাবি, গতবছর থেকে দীপাবলির আগে যে হারে মাটির প্রদীপের বায়না আসতে শুরু করেছে তা অভাবনীয়। বহরমপুর সদর ব্লকের বালিরঘাট পালপাড়ার মৃৎশিল্পী দীনেশ পান বলেন, গতবছর বিভিন্ন সাইজের কুড়ি হাজার মাটির প্রদীপের বায়না এসেছিল। শেষ মূহূর্তে বায়না এলেও নিতে পারিনি।
দীনেশবাবু আরও বলেন, মাটির প্রদীপের চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকায় বিভিন্ন মডেলের প্রদীপ তৈরি করে, রং দিয়ে সাজিয়ে বাজার ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। কিন্তু, ক্রেতাদের মন জয় করতে পারিনি। সময় আবার সুদিন ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছে।
আর এক মাটির প্রদীপের কারিগর আনন্দ পাল বলেন, মাটির পঞ্চপ্রদীপ, সপ্তপ্রদীপ, মাটির গাছার উপরে প্রদীপ তৈরি করে রং মাখিয়ে আকর্ষণীয় করে বাজারে ছেড়েছি সেমসয়। কিন্তু মানুষের নজর এলইডির দিক থেকে ঘোরানো যায়নি। কিন্তু, এবার ভালো অর্ডার পাওয়া গিয়েছে। আশা করছি, প্রদীপের সুদিন ফিরছে।
মাটির প্রদীপের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কারিগর নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। চাহিদা অনুযায়ী প্রদীপ তৈরি করা যাচ্ছে না। বালিরঘাট পালপাড়ায় ৩৫টি কুমোর পরিবারের বাস। কিন্তু, লাইটের দাপটের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে ইতিমধ্যেই অনেকে এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকে অন্য কাজে গিয়েছেন। এখন পালপাড়ার মাত্র সাতটি পরিবার মাটির জিনিস তৈরির কারবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নতুন প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ভবেশ পাল বলেন, আমার ছেলেদেরই এই কাজে আগ্রহ নেই। যেখানে অন্য পেশায় দিনে ৫০০টাকা উপার্জন করা যায় সেখানে এই পেশায় ৩০০টাকা উপার্জন করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। গতবছর ৮০০টাকা ট্রলি হিসেবে মাটি কিনেছি। এবার তার দাম ১২০০টাকা। কয়লার দাম কেজিতে ৮টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২টাকা। ৪২ইঞ্চি বেড়ের এক আঁটি পাটকাঠির দাম ৫০টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০টাকা। সেই হিসেবে প্রদীপের দাম বাড়েনি। গতবছর এক মুখ ১০০টি প্রদীপের দাম ছিল ৭০টাকা। এবার তার দাম বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে।