বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দশমীর সকালে জিয়াগঞ্জে বাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন হন পেশায় প্রাইমারি শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি মণ্ডল ও তাঁদের ছ’বছরের পুত্রসন্তান বন্ধুঅঙ্গন পাল। রামপুরহাট-১ ব্লকের সিউড়া গ্রামে বিউটি মণ্ডলের বাপেরবাড়ি। এদিন সেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন কৃষিমন্ত্রী। মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিউটির মা চন্দনা মণ্ডল। তিনি জামাইয়ের এক বন্ধুকে এই খুনের জন্য দায়ী করে তার কঠোর শাস্তি যাতে হয় সেটা মন্ত্রীকে দেখার জন্য বলেন তিনি। মন্ত্রী পরিবারকে সেব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
চন্দনাদেবী বলেন, রামপুরহাটের যুবকের সঙ্গে জামাইয়ের বন্ধুত্ব অনেকদিনের। মেয়ের বিয়ের পাকা দেখার সময় জামাইয়ের পরিবারের সঙ্গে সে এখানে এসেছিল। বিয়ের আগে ওই বন্ধুর পরামর্শেই রামপুরহাটের এক জ্যোতিষীর কাছে বিউটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিয়ের পর ওই বন্ধু নিজের মারুতি গাড়িতে জামাইকে চাপিয়ে এখানে নিয়ে আসত। এরপর জামাইয়ের কাছ থেকে যৌথ ব্যবসা করার নামে বহু টাকা নিয়েছিল ওই বন্ধু। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে মারুতি গাড়িটি জামাইকে দিয়ে দেয়। পরে আরও কয়েক দফায় জামাইয়ের কাছে টাকা নিয়েছিল। এমনকী বিউটির নামে একটি মানি মার্কেটিং কোম্পানি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের লাইফ ইন্সুরেন্সের এজেন্সি নিয়ে সে নিজেই সেটা চালাত। দু’বার ৩০০০টাকা করে কমিশন দেওয়ার পর সেটাও বন্ধ করে দেয়। মন্ত্রীকে পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই বন্ধু কথার জাদুতে ভুলিয়ে ফের জামাইকে যৌথভাবে জলের বটলিং প্ল্যান্ট করে মোটা টাকা আয়ের টোপ দেয়। সেই জন্য টাকা ধার চায়। জামাই জিয়াগঞ্জের এক বাসিন্দার কাছ থেকে সুদে সেই টাকা ওই বন্ধুকে পাইয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই টাকাও সে পরিশোধ করেনি। এনিয়েও তাঁদের সঙ্গে অশান্তি হতো। পরিবারের দাবি, ওই যুবক জামাইকে এতটাই আর্থিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছিল যে মেয়ের সংসার ঠিকমতো চলত না। মেয়েকে সেলাই মেশিন কিনে দিতে হয়েছিল। জামাই বারবার তার কাছে টাকা ফেরত চাইত। পরিবারের দাবি, এই খুনের পিছনে ওই বন্ধুর হাত রয়েছে। এছাড়া সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে জামাইয়ের অশান্তি চলছিল।
ওই যুবকের প্রতিবেশীরা জানান, শুধু ওই শিক্ষক দম্পতি নয়, দীর্ঘদিন থেকেই ছলেবলে মহিলাদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ব্যবসার নামে মোটা টাকা হাতিয়ে ব্ল্যাকমেল করত ওই যুবক। রামপুরহাটের ডাক্তারপাড়ায় তিনটি পরিবারের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যবসার নামে নিয়েছিল সে। তার মধ্যে এক গৃহবধূ জানান, তাঁর কাছ থেকে কয়েকবারে প্রায় ১০লক্ষ টাকা নিয়েছিল সে। জানিয়েছিল সাগরদিঘিতে জলের ফ্যাক্টরি করবে। তাছাড়া ওই যুবক সমাজবিরোধীদের নিয়ে ঘোরাফেরা করায় সেভাবে চাপ দেওয়া যায়নি। ফলে, রামপুরহাট থানায় ওই যুবকের নামে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি হাইকোর্টে মামলা করি।
এই শিক্ষক দম্পতি খুনের ঘটনায় বন্ধুর জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিস। তাই, শুক্রবার ওই যুবকের খোঁজে রামপুরহাটে তার বাড়ি আসেন লালবাগ এসডিপিও বরুণ বৈদ্য। তার বেডরুম থেকে বেশকিছু কাগজপত্র সিজ করা হয়। তল্লাশি চালানো হয় তার সিউড়ির ভাড়াবাড়িতেও।