কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
মানবদেহের সৌন্দর্যায়নের একটা প্রধান অংশ হল মাথার চুল। সেখানে দাঁড়িয়ে কেমো দেওয়ার ফলে মাথার চুল উঠে গেলে মানসিকভাবে অনেকেই সেটাকে মেনে নিতে পারেন না। সিনথেটিক চুল সাধারণত এই ধরনের রোগীরা ব্যবহার করতে পারেন না। সেখানে কোনও মানুষ নিজের মাথার কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি লম্বা চুল কেটে দান করলে ক্যান্সার আক্রান্তদের কিছুটা উপকার হয়। সৌন্দর্যায়নের দিক থেকেও তাদের যেমন একটা রূপ দেওয়া যায়, তেমনই মানসিকভাবেও তাদেরকে অনেকটাই শক্ত করে তোলা যায় বলে মুম্বইয়ের ওই সংস্থার দাবি। আক্রান্তদের কথা মাথায় রেখেই মুম্বইয়ে এই সংস্থাটি সাধারণ মানুষের চুল সংগ্রহ করে ক্যান্সার আক্রান্ত পেশেন্টদের কাছে পৌঁছে দেয়। তাদের এই কাজে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই চুল দানে এগিয়ে আসছেন।
মউ পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়ে। তার বাড়ি শান্তিপুরের কাশ্যপপাড়ায়। সে স্থানীয় রাধারানি নারী শিক্ষা মন্দিরের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। তার এক ভাই রয়েছে। বাবা নেই। সংসারের হাল ধরেছেন মা পুতুলদেবী। মউ পড়াশুনার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। মউ বলে, যাদের কেমো দিতে দিতে চুল একেবারে উঠে ন্যাড়া হয়ে যায়। তারা বাধ্য হয়ে মাথা ঢাকবার জন্য রুমাল বা অন্য কোনও কাপড় ব্যবহার করেন। এটা দেখে আমার ভীষণ খারাপ লাগতো। তাই আমি চুল ডোনেট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এতে সেই চুল দিয়ে বানানো উইগ পরে থাকলে ন্যাড়া মাথা দেখা যাবে না।
মৌ নিয়মিত চুলের যত্ন করে। এমনকী কখনও চুল ছোট হয়ে যাওয়ার ভয়ে ছাঁটায়নি। পরিচিত এক মহিলার কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলে মাথায় চুল বিহীন হয়ে পড়ার ঘটনা তাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। চায়ের দোকান চালিয়ে কোনও রকমে সংসার চালানো মউ তার মা পুতুলদেবীকে খারাপ লাগার বিষয়টি জানায়। পাশাপাশি খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারে, কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলে চুল উঠে গেলে পরচুলা বা উইগ লাগাতে গেলে অনেক খরচ হয়। তাই অনেকেই সেটা ব্যবহার করতে পারেন না। একজন নারী হিসাবে অন্য এক নারীর কষ্ট অনুভব করে মউ। এরপরই সে সিদ্ধান্ত নেয় নিজের মাথার চুল ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য দান করবে। এই কাজে যদি কেউ বাধা দেয় তাই ভেবে একপ্রকার চুপিসারে স্থানীয় মোহর দে বিশ্বাসের সহযোগিতায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুম্বইয়ের সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর সেই সংস্থার পদ্ধতি মেনে মউয়ের মাথার ১৯ ইঞ্চি চুলের মধ্যে ১২ ইঞ্চি চুল পার্লারে গিয়ে কেটে ফেলে। কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই চুল প্যাকেটে সিল করে মুম্বইয়ের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। মেয়ের এই উদ্যোগে গর্বিত মা পুতুলদেবীও। মউ বলে, আমার চুল কয়েক মাসের মধ্যেই আবার বড় হয়ে যাবে। কিন্তু আমার এই সামান্য চুলের বিনিময় একজনের কিছুটা উপকারে লাগবে।