বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিকে, এই ঘটনায় পুলিস জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার রাতে স্থানীয় হবিবপুর পঞ্চায়েতের কলাইঘাট এলাকার দুই যুবককে আটক করে। পরে এলাকা ছেড়ে বাইরে কোথাও যেতে পারবে না এই শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি হরলালবাবুর দোকানের সামনে যে দুই দুষ্কৃতী গুলি করেছিল প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্যে তাদের স্কেচ তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রানাঘাট থানার পুলিস। তারজন্য পুলিসের স্কেচ তৈরিতে পারদর্শীদের আনতে জেলা পুলিসের তরফ থেকে কলকাতায় যোগাযোগ করা হয়েছে। স্কেচ হাতে পেলে দুষ্কৃতীরা স্থানীয় না বাইরে অন্য কোথা থেকে এসেছে সেটা স্পষ্ট হবে। যারা এই ঘটনায় জড়িত তারা সুপারি কিলার কি না সেটাও জানা যাবে। তাই আপাতত স্কেচ তৈরির দিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে পুলিস। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিস। সবদিক খতিয়ে দেখে এই খুনের ঘটনা রাজনৈতিক, না এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস। শান্ত স্বভাবের মানুষ হরলাল দেবনাথ এভাবে খুন হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রানাঘাট ১ ব্লকের হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাইঘাট এলাকায়। রবিবার সকালেও সেখানকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এলাকায় ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো হলেও সেটা কার্যত সারা হয়েছে নীরবে। লোকের মুখে মুখে এখনও ঘুরছে খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে দোকান বন্ধ করার সময় মোটরবাইকে দুই ব্যক্তি হরলালবাবুর দোকানে এসে বাদাম চায়। হরলালবাবুর স্ত্রী চন্দনাদেবী দোকানের ভিতরে ছিলেন। হরলালবাবু দোকানের সামনে ঝাঁট দিচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় আচমকা ওই দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন হরলালবাবুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলি গিয়ে লাগে হরলালবাবুর ডানদিকে পিঠের উপর। ঘটনায় দোকান থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। ঘটনাস্থলে আসেন হরলালবাবুর ভাই মহেন্দ্র দেবনাথ। সকলে মিলে আহত হরলালবাবুকে রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল-বিজেপি উভয়পক্ষই দাবি করেন, হরলাল দেবনাথ তাদেরই দলের সমর্থক। যদিও হরলালবাবু কোনও দল করতেন না বলে তাঁর স্ত্রী চন্দনাদেবী জানান। খুনের আসল কারণ জানতে তদন্ত করছে পুলিস।
শনিবার সকালে বিজেপির নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মানবেন্দ্র রায় বলেছিলেন, কলাইঘাট এলাকার বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা হরলাল দেবনাথকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করেছে। ওই এলাকায় বিজেপির প্রভাব বাড়ার কারণে হরলালবাবুকে খুন করা হয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের রানাঘাট ১ ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষও হরলালবাবুকে নিজেদের দলের বুথ কমিটির সদস্য বলে দাবি করেন। যদিও হরলাল দেবনাথের খুন রাজনৈতিক কারণে নয় বলে এলাকার বাসিন্দারাও মনে করছেন। তবে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত শত্রু তৈরি হয়েছিল কি না সে বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিতে নারাজ পুলিসও। বাদকুল্লার সিপিএম কর্মী বাবুলাল বিশ্বাস খুনের একমাসের মধ্যেই শান্তিপুরের পুরোহিত সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও হবিবপুরের ব্যবসায়ী হরলাল দেবনাথের খুনের ঘটনা ঘটেছে। হরলাল দেবনাথের খুনের ঘটনা ছাড়া বাকি দু’টি খুনের ঘটনার অনেকটাই কিনারা করতে পেরেছে রানাঘাট জেলা পুলিস। হরলালবাবুর স্ত্রী চন্দনা দেবী এদিন বলেন, আমার স্বামীর কোনও শত্রু ছিল না। কী কারণে ভালো মানুষটাকে এইভাবে খুন হতে হল সেটা এখনও বুঝতে পারছি না। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী স্কেচ তৈরি করা হবে। ঘটনায় জড়িতরা ছাড়া পাবে না।