কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘুমুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক গ্রামে শনিবার রাতে দাপিয়ে বেড়ায় দাঁতালটি। রাত ১০টা নাগাদ দাঁতালটি পাথরডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়ে। এবিষয়ে হাসপাতাল কোয়ার্টারের বাসিন্দা সেকেন্ড এএনএম ললিতা কালিন্দি বলেন, আমাদের আবাসনের দরজা খোলা ছিল। স্বামী বনবিহারী কালিন্দি আবাসনের বাইরে পায়চারি করে ফোনে কথা বলেছিলেন। তিনি হাসপাতালের ভিতরে হাতিটিকে প্রথম দেখতে পান। হাতিটিকে দেখতে পেয়েই তিনি হাসপাতালের দোতলায় উঠে যান। তার কিছুক্ষণ পরেই আমি দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি মারতেই আবাসনের বাইরেই বিশালাকার হাতিটিকে দেখতে পেয়ে আঁতকে উঠি। কী করব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ততক্ষণে হাসপাতালের রোগীরা এবং তাঁদের আত্মীয়রাও হাসপাতালের উপর থেকে দেখার চেষ্টা করছিলেন। পরে হাতিটি কোয়ার্টারের পিছনের দিকের দেওয়াল ভেঙে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। বড়সড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেলাম।
এবিষয়ে বাঘমুণ্ডির বিএমওএইচ অমরেন্দ্র রায় বলেন, ওই এএনএমই ফোন করে আমাকে গোটা বিষয়টি জানান। হাসপাতালের দেওয়ালের একাংশ ভেঙেছে হাতিটি। এ নিয়ে আমার কার্যকালের মধ্যে দু’বার হাতি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ল। তবে কোনও হতাহতের খবর নেই।
অন্যদিকে, এদিন হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ার আগে হাতিটি বাঘমুণ্ডির একাধিক গ্রামে দাপিয়ে বেড়ায়। বাঘমুণ্ডির বাড়েরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সত্যরঞ্জন মাহাত বলেন, সাইকেল নিয়ে থানা থেকে রাত ৯টার কিছু আগে ডিউটি করে ফিরছিলাম। কুদলুং থেকে আমতলা আসার রাস্তায় একবারে সামনে হাতিটি পড়ে যায়। কোনওক্রমে একজনের বাড়িতে ঢুকে পড়ি। পরে হাতিটি বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ওই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম।
স্থানীয় পাথরডি গ্রামের বাসিন্দা বীরসিং মুড়া বলেন, ওই দাঁতালটি তো শনিবার ১০টার আগেই গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়েছিল। কোনও ঘরবাড়ি না ভাঙলেও ফসলের অনেক ক্ষতি করেছে। আমার নিজেরই প্রায় দেড়বিঘা জমির উপর দিয়ে দাঁতালটি হেঁটে যাওয়ায় বেশ খানিকটা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের অনেকেরই ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই হাতির আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাঘমুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামবাসীদের অনেকেই ফসল রক্ষা করতে বড় গাছে মাচা তৈরি করে তাতেই রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। লহরিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিমাংশু মাহাত হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে গ্রামেরই কয়েকজনের সঙ্গে একটি আমগাছে মাচা তৈরি করে কার্যত পাহারা দিচ্ছেন। একই ভাবে কুদনা গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় মাহাতও কুসুম গাছে মাচা তৈরি করে রয়েছেন বেশ কয়েকদিন ধরেই। হিমাংশুবাবু এবং হৃদয়বাবু বলেন, গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই হাতির আতঙ্কে সন্ধ্যার পর বাইরে বেরনো মুশকিল। আমরা তো সন্ধ্যার পর বাঘমুণ্ডি বাজারেও যেতে পারছি না। এবছর বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ কম হয়েছে। হাতির জন্য প্রতিদিনই কোনও না কোনও গ্রামবাসীর কষ্ট করা ফসলে ক্ষতি হচ্ছে। ফসলে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না। আবার পেলেও তা নামমাত্র। তাই বাধ্য হয়ে গাছের উপরে মাচা তৈরি করে থাকতে হচ্ছে। যেকোনও ভাবে ফসলটুকু বাঁচানোর চেষ্টা করছি মাত্র।
এবিষয়ে বাঘমুণ্ডির বিট অফিসার সাহেব মাহাত বলেন, দাঁতালটি গত বছরেও ঠিক এই সময়েই হাসপাতালে ঢুকে পড়েছিল। হাসপাতালের দেওয়াল ভাঙা ছাড়াও প্রায় এক হেক্টরের অর্ধেক জমির ফসল নষ্ট করেছে। শনিবার বেলটাঁড় এলাকা থেকে চিটাহি হয়ে দাঁতালটি সোজা পাথরডি গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়ে। উত্তেজিত গ্রামবাসীর সামনে হাতিটিকে আর সেই সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। দাঁতালটি হাসপাতাল পেরিয়ে টুরগা ড্যাম সংলগ্ন জঙ্গলের দিকে চলে যায়। গত কয়েকদিন ধরে হাতিটি বাঘমুণ্ডি, মাঠা ও অযোধ্যা রেঞ্জের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে। দু’-একদিন পরপর হাতিটি লোকালয়ে চলে আসছে।
ওই দাঁতালটি এখন বনদপ্তর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। দাঁতালটি ওই তিনটি রেঞ্জের মধ্যে বারবার অবস্থান পরিবর্তনও করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এবিষয়ে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে সরব হয়েছেন।