রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
পুজো কমিটির সভাপতি অজয় কুমার ঘটক বলেন, ১৯৯৬ সালে এই পুনর্বাসন কলোনি গড়ে ওঠে। ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য গঙ্গাজলঘাটি থানার গোঁসাই গ্রাম, শিমুলিয়া, আঠুরবাইদ এই তিনটি গ্রাম ছাড়াও আমডাঙা ও দুর্লভপুর গ্রামের একাংশ মানুষ বাস্তুহারা হন। ১৯৮৬ সাল থেকে ওইসব গ্রামের কৃষি জমি নিয়ে ডিভিসি তাদের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করে। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী বসন্ত শাঠে বিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। সেই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও ডিভিসির মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ভূমি ও বাস্তুহারাদের পরিবার পিছু একজন চাকরি দেওয়ার চুক্তি হয়। ১৯৯৬ সালে ডিভিসি বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলেও চুক্তি মতো ৫২০জনের মধ্যে মাত্র ৯০জনকে চাকরি দিলেও বাকিদের চাকরি দেয়নি। এরপর একদিনের নোটিসে ওই সব গ্রামের পরিবারগুলিকে উঠে আসতে হয় ঘটকগ্রামের পশ্চিম প্রান্তের ফাঁকা মাঠে। তারপর বাসিন্দারা সেখানে বাসস্থান গড়ে তোলেন ধীরে ধীরে।
অজয়বাবু আরও বলেন, ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ডিভিসির চুক্তি মতো কাউকে চাকরি না দেওয়ায় বাসিন্দারা সব হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটাতে থাকেন। কারণ, ১৯৮৬ সালে কৃষি জমি নিয়ে নেওয়ায় চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় কৃষি জমির দামও নির্ধারিত হয়েছিল খুব সামান্য। চাষিরা যে দাম পেয়েছিলেন তাতে বাড়ি করা আর দীর্ঘ দিন কৃষিফসল না পেয়ে সেই টাকা খাই খরচে শেষ করে ফেলেছিলেন। ফলে কৃষিজীবী মানুষগুলির জীবিকার কোনও উপায় ছিল না। সেই সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিই লক্ষ্মী হারিয়ে এখানে বসত করছি, তাই লক্ষ্মীর আরাধনা করি। দেবীর কাছে চাকরি পাওয়ার বর চেয়ে আমরা পুজো শুরু করি। আশ্চর্যের ব্যাপার, ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে পুজো করার পরই নভেম্বরে ডিভিসি নিয়োগপত্র দেয় কিছু ভূমিহারা পরিবারকে। এরপর ২০০০ সালের নভেম্বরেই আরও কিছু নিয়োগপত্র আসে। এভাবে ধাপে ধাপে ৫২০ জনেরই চাকরি হয়। সেই থেকেই দেবী এলাকার মানুষের কাছে বরদা রূপে পরিচিতি পান। দেবীর এই মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এরপর থেকে প্রতিবছর দূর-দূরান্তের বহু মানুষ মানত রাখেন দেবীর কাছে।
গোঁসাই গ্রাম থেকে উঠে আসা গয়ারাম ঘোষাল, শ্যামল নন্দী, দুর্লভপুর গ্রামের অখিল ঘটক, শিমুলিয়ার কুটুর মাজি বলেন, সেই সময় চাকরি না পেলে আমাদের অনাহারে দিন কাটানো ছাড়া উপায় ছিল না। লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করে আজ আমরা চাকুরিজীবী।
পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে উঠে এসে এখানে যে কলোনি গড়ে উঠেছে তাতে একটা মিশ্র সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সারা বছর নিজের সংস্কৃতি নিয়ে থাকলেও পুজোর এই চারদিন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে উৎসবে মেতে উঠি।