কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
দু’টি মন্দিরেই সাধক বামাখ্যাপার অবাধ বিচরণ ছিল। কথিত আছে, শুক্লা চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব হয়েছিল। তাই এদিন ভোর ৩টে নাগাদ তারামাকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিশ্রাম মন্দিরে আনা হয়। জীবিতকুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজানো হয়। এদিন তারা মা পশ্চিম মুখে বসে পূজিতা হন। কারণ পশ্চিম দিকে মায়ের বোন অর্থাৎ মুলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দির। কিন্তু, কেন এদিন মাকে পশ্চিমমুখী রাখা হয়? এব্যাপারে মন্দিরের সেবাইত তথা গবেষক প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রাচীন কিছু পুঁথি ঘেঁটে জানা গিয়েছে বাংলা ১১০৮ ও ইংরেজি ১৭০১ সালে আবির্ভাব তিথিতে বিশ্রাম মন্দিরে তারা মাকে পূর্বদিকে বসিয়ে পুজো শুরু করার তোড়জোড় করেন নাটোরের রানি ও তদানীন্তন তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পাণ্ডারা। এমন সময় মুলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। যা দেখে তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পাণ্ডারা হইহই করে উঠলেন এবং রাজাকে আসন থেকে তুলে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন। রাজা মায়ের প্রতি অভিমান করে চলে এসে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে কবিচন্দ্রপুরে ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো করে মুলুটি গ্রাম ফিরে যান। ওই রাতেই প্রধান তান্ত্রিক ১ম আনন্দনাথকে তারা মা স্বপ্ন দিয়ে বলেন, রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, সে অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে আমার পুজোর মুখ যেন পশ্চিমমুখে মুলুটির মৌলিক্ষার মন্দিরের দিকে হয়। সেই থেকে বিশেষ এই তিথিতে মাকে পশ্চিমমুখী বসিয়ে পূজার্চনা করা হয়। অন্যদিকে, বহুযুগ ধরেই রাজার অভিমানের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আজও কবিচন্দ্রপুরে দ্বারকা নদের পাড়ে তারা মায়ের আরাধনা করেন মুলুটি মন্দিরের সেবাইতরা। এবারও তার অন্যথা হয়নি। দুপুরে সেখান থেকে তাঁরা ফিরে যান মুলুটি। এরপর বিকেলে মৌলিক্ষা মাকে সাজিয়ে বিশেষ পুজো ও সন্ধ্যারতি করা হয়। দেওয়া হয় ছাগ বলিও। রাতে তারাপীঠে যখন তারা মাকে পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, দু’রকম মাছ ভাজা, বলির পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়, ঠিক তখনই একই পদ দিয়ে মৌলিক্ষা মাকে ভোগ দেওয়া হয়। পরে সেই ভোগের প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিলি করা হয়।
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, দুই বোনের চিরাচরিত প্রথার আজও কোনও বদল হয়নি। দুর্গাপুজোর পর বিশেষ এই তিথিতে তারা মায়ের কাছে পুজো দিতে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়েছে। মুলুটি মন্দিরের সেবাইত পুলক চট্টোপাধ্যায় বলেন, চতুর্দশী তিথিতে তারা ও মৌলিক্ষা মায়ের মিলন হয়। ফলে, অনেকেই চান দুই বোনের কাছেই পুজো অর্পণ করতে। তাই তারা মায়ের কাছে পুজো দিয়ে ১৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ভক্তরা ভিড় জমান ঝাড়খণ্ডের মৌলিক্ষা মায়ের মন্দিরে। মিলন হয় দুই রাজ্যের মানুষেরও।
অন্যদিকে চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পুজো হয় মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত নলহাটির আকালিপুরের গুহ্যকালীর। বসে মেলাও। এদিন রাজার বর্তমান বংশধরেরাও সেখানে হাজির হয়েছিলেন।