বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
সম্প্রতি, বছর তিনেক আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দুর্গা ঠাকুরের বিসর্জনকে ঘিরে মহানগরের রাজপথে শুরু হয়েছিল পুজো কার্নিভাল। অথচ শতাধিক বছর আগে থেকে রীতি অনুসারে আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের বারোসতীর ডাঙায় শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের প্রথা আজও রয়ে গিয়েছে। এলাকার মানুষের কাছে এই উৎসব 'ভাসানের মিলনমেলা' নামেই পরিচিত। আর এই মিলনমেলা দেখতে ভিড় জমান আশপাশের কয়েকহাজার মানুষ। প্রতিমা দর্শন, ঢাকের লড়াই ও শোভাযাত্রা দেখার পাশাপাশি দর্শনার্থীরা মেলাতে চুটিয়ে কেনাকাটা করেন। কয়েকঘণ্টার বেচাকেনার জন্য প্রচুর মেলার দোকান বসে বারোসতীর ডাঙায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজো উদ্যোক্তারা ট্রাক্টর কিংবা ট্রাকে ঠাকুরকে চাপিয়ে এক এক করে হাজির হন বারোসতীর ডাঙায়। কোনও ঠাকুরের শোভাযাত্রার সামনে থাকে ঢাকের নাচন। আবার কোনও ঠাকুরের পিছনে রয়েছে ডিজে বাজানোর হিড়িক। এভাবে ডাঙা পরিক্রমা করে, একএক করে ঠাকুর মাঠে দাঁড়ায়। ঘণ্টাখানেক ডাঙায় থাকার পর ঠাকুর নিয়ে আবার নিজ গ্রামে ফিরে যায় উদ্যোক্তারা। তারপর গ্রামের পুকুরে প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। স্থানীয় রামনগর, গোস্বামীখণ্ড, মল্লিকপুর, খটনগর, হাটমাধবপুর, গোপালপুর কলোনি ও মালিয়ারা গ্রামের সাবেকি ও সর্বজনীন মিলিয়ে ১০-১২ টি ঠাকুর প্রতিবছর শোভাযাত্রায় শামিল হয়। কিন্তু এবার দশমীর দিন বিকাল থেকেই এলাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। ফলে একাদশীর দিন সকালে বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইমত এদিন সকালে শোভাযাত্রা করে ঠাকুরগুলি বারোসতীর ডাঙায় হাজির হয়। তবে এদিনও আকাশের মুখভার ও মাঝেমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টির কারণে দু-একটি ঠাকুরের উদ্যোক্তারা এবারের শোভাযাত্রায় শামিল হয়নি। বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে আবার কেউ কেউ ট্রাকের উপর পলিথিন টাঙিয়ে দেয়।
গোস্বামীখণ্ড গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা অমর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বেশ কয়েকবছর আগে বৃষ্টির জন্যে এভাবেই দিনের বেলায় বিসর্জন করতে হয়েছিল। তবে সেবার সম্ভবত দ্বাদশীর দিন ঠাকুর বিসর্জন করা হয়েছিল। এই রীতি বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে আমরা দেখে আসছি।
জানা গিয়েছে, বারোসতীর ডাঙায় শোভাযাত্রার জন্য স্থানীয় রামনগর পঞ্চায়েতের তরফে সমস্তকিছুর ব্যেবস্থা করা হয়। কচিকাঁচাদের জন্য ডাঙার একপাশে বাজি ফাটানোর জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। রামনগর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি আসগর শেখ বলেন, দশমীর রাতে দুর্গা ঠাকুরের শোভাযাত্রা দীর্ঘদিন ধরে এখানে চলে আসছে। সেজন্য্ পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এবারও উৎসব প্রাঙ্গণে পানীয় জল, আলো, অনুসন্ধান অফিস থেকে সমস্তকিছুর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দশমীর দিন অবিরাম বৃষ্টির জন্য একাদশীর সকালে শোভাযাত্রা করা হয়েছে।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। তাই সারাবছর কর্মসূত্রে দূরদূরান্তে থাকলেও উৎসবের এই চারটি দিন বাঙালি বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকে। এমনই একজন হলেন প্রবীর বিশ্বাস। বাড়ি পল্লীশ্রী গ্রামে। পেশায় শিক্ষক। প্রবীরবাবু বলেন, প্রতিবছর দুর্গোৎসবের টানে বাড়ি ফিরে আসি। আর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বারোসতীর ডাঙায় হাজির হই। কিন্তু এবার বৃষ্টির জন্য্ রাতের আলোকসজ্জায় ঠাকুর দেখার যে অন্যতরকম একটা অনুভূতি সেটা মিস করলাম। তবে রাতের অন্ধকারে আবার অনেক পরিচিতরা পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা বুঝতে পারি না। এবার দিনের আলোতে সবাইকে দেখতে পাচ্ছি, তাদের সঙ্গে পুরনোদিনের কথা নিয়ে স্মৃতিচারণ হচ্ছে। বেশ ভালো লাগছে।