বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর সকালে জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে নিজের বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হন সাগরদিঘি থানার সাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল। খুন হন তাঁর স্ত্রী বিউটি এবং ছেলে বন্ধুঅঙ্গন। একই পরিবারের তিনজন খুনের ঘটনা জানাজানি হতেই প্রতিবেশী সহ এলাকার বহু মানুষ ভিড় জমান। স্থানীয়রা বলেন, কয়েক দিন ধরে একজন যুবক ওই প্রকাশবাবুদের বাড়ির দিকে নজর রাখছিল। তাই ঘটনার আগে খুনি রেইকি করে থাকতে পারে বলে স্থানীয়দের অনেকেই অনুমান করছেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন সকালের দিকে প্রকাশবাবু বাজারে গিয়েছিলেন। ৭০০ গ্রাম মাছ কিনে বাড়ি ফেরেন। সকালে এক ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে দুধ দিয়ে যান। তখনও সব কিছু স্বাভাবিক ছিল বলে ওই ব্যক্তিকে জেরা করে পুলিস জেনেছে। এক আধিকারিক বলেন, দুষ্কৃতীদের ওই পরিবারে যাতায়াত ছিল। সেকারণে বিশ্বাস করেই তাঁরা দরজা খুলে দেন। রুমে ঢোকার বেশ কিছুক্ষণ পরে সুযোগ বুঝে তারা হত্যালীলা চালায়। মৃত শিক্ষকের দিদি বন্ধুপ্রিয়া সরকার বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমরা ছোট থেকে মামার বাড়ি সাগরদিঘির বারালায় বড় হয়েছি। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বীরভূমের নাইসোর গ্রামে বাবার নামে অনেক সম্পত্তি আছে। তবে তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। বীরভূমের সিউড়া গ্রামে ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম।
এদিকে খুনের খবর ফোনে পৌঁছতেই সেখানে সাহাপুরের অনেকে আসেন। স্কুলের শিক্ষকরাও আসেন জিয়াগঞ্জে। মৃত শিক্ষকের এক প্রতিবেশী বলেন, মাস্টারমশাই নতুন বাড়ি তৈরি করে বছর দেড়েক ধরে এখানে ছিলেন। পাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে সেভাবে না মিশলেও রাস্তায় দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলতেন। কখনও সখনও কুশল বিনিময় করতেন। অত্যন্ত ভদ্র এবং ভালো মানুষ ছিলেন। প্রতিবেশী বধূ সুচেতা দাস বলেন, মাস্টার মশাইয়ের স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া বা আসার পথে দেখা হলে হেসে কথা বলতেন। ছেলেটিও এই পাড়ার একটি বাড়িতে খেলতে যেত। খবরটা শোনার পরে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খবরটা শোনার পর এলাকার অনেক বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। পাড়াসুদ্ধ লোকের খাওয়া, ঘুম যেন কোথায় উবে গিয়েছে। সবসময় তিনজনের মুখ চোখে ভাসছে।
সহকর্মীর কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে শিক্ষক সুনীল মণ্ডলের। তিনি বলেন, বন্ধুপ্রকাশবাবু রবিবার অষ্টমীর দিন গ্রামে এসেছিলেন। দু’জনের মধ্যে অনেকক্ষণ কথাবার্তা হয়। দু’জনের মধ্যে শারদীয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ও হয়। ওইদিন গ্রামে রাত কাটিয়ে সোমবার জিয়াগঞ্জে ফিরে যান। তখন ভাবিনি সেটাই শেষ দেখা হবে। যে বা যারা এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের ফাঁসি হোক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুফিয়ান খান বলেন, বন্ধুপ্রকাশবাবুর ঠোঁটে সর্বদাই হাসি লেগে লাগত। অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র এবং সৎ মানুষ ছিলেন। স্কুলের যে কোনও বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিতেন। এরকম একজন মানুষকে হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ। তবে দোষীদের চরম শাস্তির দাবি করছি।