সংবাদদাতা, পূর্বস্থলী: প্রাকৃতিক দুর্যোগে একদিনের পরিবর্তে দুদিনে পালন হল সমুদ্রগড়ের ঐতিহ্যবাহী আতশবাজি উৎসব। প্রতিবছর দশমীর সন্ধ্যা থেকে আতশবাজি উৎসব হয়ে আসছিল সমুদ্রগড় অঞ্চলে। এলাকার প্রায় ২০টি পুজো কমিটি আতশবাজি উৎসবে মেতে ওঠে। কদমগাছ থেকে চরকি, আসমান গোলা, তুবড়ি সহ নানা বিচিত্র ধরনের বাজি পোড়ানো হয় সমুদ্রগড়ে। এক একটা পুজো কমিটি বাজি পোড়াতে ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করে বলে জানা গিয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আতশবাজি উৎসব দু’দিনে পালন হল। বুধবার নসরৎপুর নতুনপাড়া, গৌরাঙ্গপাড়া উত্তর, গৌরাঙ্গ মধ্যপাড়া, হাটসিমলা মধ্যপাড়া, ধুলারাস্তা সহ ৭ জায়গায় আতশবাজি উৎসব পালন হয়। এদিনও সন্ধ্যা থেকে দর্শকদের ঢল নামে। তবে এদিন প্রশাসনের তরফে এসটিকেকে রোডে ওই উৎসব করতে দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে তারা ওই উৎসব করে পাড়ার বিভিন্ন মাঠে। মঙ্গলবার বৃষ্টির মধ্যে ১৩টি পুজো কমিটি বাজি উৎসব পালন করে। সন্ধ্যা থেকে ৫ ঘণ্টার জন্য এসটিকেকে রোড অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা তথা পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বিকাশ বসাক বলেন, প্রতিবছর দশমীর দিনেই সমুদ্রগড়ে বাজি উৎসব হয়ে আসছে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। তাঁতের হাটে সব কমিটি মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বুধবার সবাই বাজি উৎসব করবে। কিন্তু বিডিও, এসডিপিও সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা নির্দেশ দেন, বেশি রাত হলেও মঙ্গলবার রাতেই বাজি উৎসব করতে হবে। নতুবা পরদিন এসটিকেকে রোডে বাজি উৎসব করতে দেওয়া হবে না। সেই মতো বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই বিক্ষিপ্তভাবে ৭৫ শতাংশ পুজো কমিটি বাজি উৎসব করে। বাকিরা বুধবার সন্ধ্যা থেকে পাড়ার ভিতরে উৎসবে শামিল হয়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫ দশক আগে সমুদ্রগড়ে আতশবাজির উৎসব শুরু হয়েছিল। বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার বিসর্জনে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। এসটিকেকে রোড়ে প্রতিমা নিয়ে রীতমতো শোভাযাত্রা বের হয়। এই শোভাযাত্রায় আতশবাজি পুড়িয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন পুজো কমিটির সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রথম দিকে সমুদ্রগড়ে আতশবাজির উৎসব চালু করে ইটখোলা পাড়া, পারুলডাঙা, সমুদ্রগড় স্টেশনপাড়া ও নতুনপাড়া। পরে সমুদ্রগড় নসরৎপুর অঞ্চলের বিভিন্ন পাড়ায় বাজি উৎসব ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দিকে বাজি উৎসবকে ঘিরে পাড়ায় পাড়ায় রেষারেষি পর্যন্ত হতো। মুর্শিদাবাদ থেকে বাজি তৈরির কারিগররা আসেন সমুদ্রগড়ে। দু তিন সপ্তাহ ধরে বাজি তৈরি করেন। তবে এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে তেমনভাবে জমে উঠল না সমুদ্রগড়ের ঐতিহ্যবাহী আতশবাজির উৎসব।