বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
গ্রামের বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন ঘোষ বলেন, ১৯৯৮ সালের পর গঙ্গার এত ভয়াবহ চেহারা আগে কখনও দেখেনি। গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পুকুরের চেহারা নিয়েছিল। এভাবে চলতে থাকলে আর মনে হয় না সামনের বছর দুর্গাপুজো করতে পারব। গঙ্গা গ্রাম থেকে ২০০ মিটার দূরে বইছে। আরেক বাসিন্দা সেন্টু ঘোষ বলেন, গ্রামে এখনও জল বইছে। জল ডিঙিয়েই মন্দিরে যেতে হয়েছে। এবছর পুজো করতে পারব বলে ভাবতে পারেনি। ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত গ্রামের অনেকেই ত্রাণ শিবিরে ছিলেন। যাঁরা গ্রামে থাকতে পেরেছিলেন, তাঁরাই পুজোর আয়োজন করেন। একটু জল নামতেই সপ্তমীর সকাল থেকে সবাই বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। পুজো ক’দিন সবাই আনন্দের মধ্যে কাটিয়েছি। গ্রামের আরেক বাসিন্দা মোহন ঘোষ বলেন, গঙ্গার জল এখনও কমেনি। সেকারণে গ্রাম থেকেও সম্পূর্ণ জল নামছে না। মাটির বাড়িগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ লোকই দিনমজুরি করে সংসার চলান। তাঁদের পক্ষে নতুন করে ঘর বাঁধা খুব কঠিন। তবে এতকিছুর মাঝেও আমরা দেবীর আরাধনা করতে ভুলিনি। পুজোর চারদিন সমস্ত রীতি মানা হয়েছিল। এভাবে গঙ্গা রুদ্র রূপ ধারণ করলে সামনের বছর আর আমরা পুজো করতে পারব না। বিগত পাঁচ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে পুজো করে আসছি। যদি গঙ্গার ভাঙনে বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায় তাহলে পুজো করব কেথায়।
প্রসঙ্গত, এবার ফরাক্কা ব্লকে গঙ্গা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হোসেনপুরের অধিকাংশ বাড়ি নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে। পুজোর দিনগুলিতেও এখানকার বহু পরিবারকে ত্রাণ শিবিরেই কাটাতে হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এই ব্লকের স্বাস্থ্য দপ্তরের সমস্ত কর্মী এবং আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। এখনও ওই এলাকায় নদীর ভাঙন চলছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গার জল কমলেই পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হবে। তা নিয়ে কয়েক দিন আগে সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জেলায় এসে বৈঠকও করে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও জল না কমায় সেচ দপ্তর পাড় বাঁধানোর কাজে হাত দিতে পারেনি।
তবে দুর্যোগকে তোয়াক্কা না করেই পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল ডিয়ার ফরেস্ট। অনেকেই নতুন জামা কাপড় কিনতে না পারলেও পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে ভুলে যাননি। যদিও সামনের বছর কি হবে তা জানে না এই গ্রামের কেউই। পুরো গ্রামটাই ভাসানের কিনারায় চলে এসেছে। তবুও একাদশীর দুপুরে গঙ্গায় দেবীকে বিসর্জন দেওয়ার সময় কপালে হাত ঠেকিয়ে পুরো গ্রাম সমস্বরে বলে উঠল, আসছে বছর আবার হবে। বিদায়বেলায় ডুবতে থাকা মায়ের মুখের দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে চোখে এসে গেল অনেকের। সেসময় ফের আওয়াজ উঠল, আবার এসো মা।