বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
জঙ্গলে ঘেরা রামপুরহাটের বেলপাহাড়ি গ্রাম। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে গভীর জঙ্গল। সেই জঙ্গলে বিরাজ করেন এলাকার গ্রাম্য দেবতা নাককাটি মা। কথিত আছে, প্রায় ১০০ও বেশি বছর ধরে একাদশীতে এই জঙ্গলে মেলার আয়োজন করে আসছেন এলাকার আদিবাসীরা। মসিনা, আরাবুনি, মৌবুনি, কুলবুনি, আলদশা সহ প্রায় ২৫টির বেশি আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। অধিকাংশ আদিবাসীই হিন্দু। কিন্তু, এই গ্রামগুলিতে কোনও দুর্গাপুজোর আয়োজন হয় না। পুজোর ক’টা দিন তাঁরা লাগোয়া বড়জোল ও বেলপাহাড়ি গ্রামের সর্বজনীন পুজোমণ্ডপে ভিড় জমান।
একাদশীর বিকেলে এই দুই গ্রামের তিনটি প্রতিমাকে নাককাটি মায়ের জঙ্গলে আমন্ত্রণ জানান আদিবাসীরা। সেইমতো এদিন বিকেলে তিনটি দুর্গাপ্রতিমাকে নাককাটি মায়ের সামনে নিয়ে আসা হয়। প্রচুর মানুষ সেখানে হাজির হন। সেখানে দুর্গাপুজোর আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করতে মেলার আয়োজন করেন আদিবাসীরা। হরেকরকমের দোকান বসে। বিকেলে থেকেই বিভিন্ন গ্রামের আদিবাসীরা নাচতে নাচতে সেখানে হাজির হন। এরপর তাঁরা তিনটি প্রতিমাকে বরণ করে নেয়। চলে মাদলের বোলে আদিবাসী নৃত্য, গান। শেষে চলে সিঁদুরখেলা, আলিঙ্গন ও মুখমিষ্টি। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনও ঘটে বার্ষিক এই উৎসবে।
বড়জোল গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা পুজো উদ্যোক্তা কিশোরীমোহন পাল বলেন, আদিবাসী গ্রামগুলিতে কোনও দুর্গাপুজোর চল নেই। ফলে, পুজোর চারদিন তাঁরা আনন্দ থেকে বহু দূরে থাকেন। কিন্তু, একাদশীতে সেই আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করতে গ্রাম্যদেবতার সামনে মাকে নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান তাঁরা। প্রায় ১১০ বছর থেকে এই রীতি চলে আসছে। আদিবাসীরাই উদ্যোগ নিয়ে মেলা বসান। রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতিমাকে সেই মেলায় রাখা হয়। পরে ফের প্রতিমা তিনটিকে গ্রামে ফিরিয়ে এনে নির্দিষ্ট পুকুরে নিরঞ্জন দেওয়া হয়। বহু আদিবাসী মানুষ সেই নিরঞ্জন যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
মসিনা গ্রামের দীনেশ টুডু, আরাবুনির মলয় হাঁসদা বলেন, আদিবাসী গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। ফলে, বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে আমাদের পুজো দেখতে হয়। কিন্তু, সকলের তো গ্রাম ঘুরে পুজো দেখা সম্ভব নয়। তাই গ্রাম্য দেবতার সামনে দুর্গা প্রতিমাগুলিকে আনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানেই আমরা চারদিনের আনন্দ কয়েক ঘণ্টার মধ্য দিয়ে উপভোগ করি। প্রচুর মানুষের সমাগম হওয়ায় কয়েক ঘণ্টার জন্য মেলা বসে। আদিবাসীরাই তাঁদের হাতের তৈরি খাবার বিক্রি করেন। দূরে থাকা অনেক অদেখা আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। ফলে, একপ্রকার এটা মিলন মেলা নামেও পরিচিত।