শীর্ষেন্দু দেবনাথ, কৃষ্ণনগর, বিএনএ: মহাষষ্ঠীতে জনজোয়ারে ভাসল নদীয়া জেলা। থিমের পুজোগুলি দেখতে এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। ভিড় সামাল দিতে পুজো উদ্যোক্তা থেকে পুলিসকে কার্যত হিমশিম খেতে হয়। বাদকুল্লা, রানাঘাট, মাজদিয়া, তেহট্ট, নবদ্বীপ, শান্তিপুর, ফুলিয়া, নাকাশিপাড়া সর্বত্রই পুজো মণ্ডপগুলিতে জনস্রোত দেখা গিয়েছে। কৃষ্ণনগরের মানুষজন বাদকুল্লা, মাজদিয়ার ঠাকুর দেখতে ভিড় করেন। কৃষ্ণনগরেও মণ্ডপে মণ্ডপে এদিন ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় করতে দ্বিধা করেননি আট থেকে আশি।
জেলার বিগ বাজেটের পুজোগুলিতে পঞ্চমী থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছে। ভিড় এড়াতে অনেকেই এদিন সকালে ঠাকুর দেখা সেরে ফেলেন। আর সন্ধ্যার পর চলে জমিয়ে আড্ডা। অনেকে আবার সপ্তমী, অষ্টমীতে বৃষ্টি হওয়ার ভয়ে বিগ বাজেটের মণ্ডপগুলি ঘুরে দেখেন। জেলার বেশ কয়েকটি বিগ বাজেটের পুজো রানাঘাট ও বাদকুল্লা শহরে হয়। এছাড়াও শান্তিপুর, তাহেরপুর, বীরনগর, ধানতলা, কুপার্সেও রয়েছে ছোট বড় অনেক পুজো। রানাঘাট ও বাদকুল্লা দুই শহরের পুজোগুলির ভিড়ের ছবি একইরকম। পঞ্চমী থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখার লম্বা লাইন পড়ে। প্রত্যেক পুজো উদ্যোক্তা দাবি করেন, জেলার সেরা পুজোর দৌড়ে থাকবে তাঁদের কমিটি।
রানাঘাটের দে চৌধুরীপাড়া অ্যাথলেটিক ক্লাব, সিদ্ধেশ্বরীতলা সর্বজনীন, সড়ক পাড়া, ক্রিকেট অ্যান্ড অ্যাথলেটিক ক্লাব, কৃপাময়ীতলা উদয়ন সঙ্ঘ, চারেরপল্লি, চিলড্রেনস পার্ক যেমন রয়েছে সেরা পুজোগুলির মধ্যে তেমনই বাদকুল্লার অনামী, সম্প্রীতি, ন্যাশনাল বয়েজ ক্লাব, ব্যবসায়ী সমিতি, পূর্বপাড়া বারোয়ারি, পল্লিশ্রী, বাদকুল্লা ইউনাইটেড, উদয়ন সঙ্ঘের পুজোগুলিও রয়েছে। ভিড় সামলাতে পুলিসও আগেভাগে নেমে পড়ে ময়দানে। চাকদা, রানাঘাট, বগুলায় খোলা হয়েছে পুলিস বুথ। চালু করা হয়েছে দু’টি হেল্পলাইন নম্বর। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় পুজোর দিনগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। ইভটিজিং রুখতে যেমন অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে, তেমনই বয়স্ক নাগরিক ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার জন্যেও থাকছে পুলিসের স্বেচ্ছাসেবক।
তেহট্ট মহকুমাজুড়েও পুজোমণ্ডপগুলিতে এদিন ব্যাপক ভিড় হয়। মুরুটিয়া থানার কেচোয়াডাঙার দিশারী সঙ্ঘ ও সাহাপাড়ার সর্বজনীন পুজো কমিটির মণ্ডপে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করেন। এবার দিশারী সঙ্ঘের পুজোর থিম হায়দরাবাদের একটি মন্দির। বাজেট ৩৫ লক্ষ টাকা। সাহাপাড়ার বাজেট ১৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া নাজিরপুরের মহিলা পরিচালিত পুজো মণ্ডপেও ভালো ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তেহট্ট থানার চিলাখালি গ্রামের ঢাকা সম্প্রদায় ও কুষ্টিয়া সম্প্রদায়ের পুজো দেখতে মানুষ ভিড় করেন। পলাশীপাড়া থানার পলাশীপাড়া আরণ্যক, বাসস্ট্যান্ড, ইন্দিরাপল্লি, বিজয়নগর, বার্ণিয়া দুর্গা বাড়ি, হাঁসপুকুরিয়ার চকবিহারী পুজোতেও মানুষ ভিড় করে। তেহট্ট শহরে হাউলিয়া পার্ক মোড়, সিনেমাহল পাড়া, হাইস্কুলপাড়া, জিতপুর মোড় বারোয়ারি, নতুন পাড়া বারোয়ারি, বাজার পাড়া বারোয়ারি, বিডিও অফিস পাড়া বারোয়ারি, হাটপাড়া বারোয়ারি, মন্দির পাড়া বারোয়ারি, চাতরপাড়া বারোয়ারি, বাইতি পাড়া বারোয়ারি, কালীতলাপাড়া বারোয়ারি, খাসপুর, তরণীপুর হালদারপাড়া বারোয়ারি সহ সর্বত্র ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তরণীপুর হালদারপাড়া বারোয়ারি এবার পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সাবেকি পুজোর মধ্যে ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আপামর নবদ্বীপবাসীর পুজো পোড়ামাতলার সর্বজনীন দুর্গাপুজো, ষষ্ঠীতলার চারেরপল্লির সর্বজনীন দুর্গাপুজো, শ্রী শ্রী যোগমায়া মহিলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোতে মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় যেমন ভিড় হয়, তেমনই বিগ বাজেটের থিমের পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে।