কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
বৃহস্পতিবার ফরাক্কার কুলিদিয়ারে ত্রাণশিবিরে যান মন্ত্রী জাভেদ খান। নিউ ফরাক্কা স্কুলে গিয়ে তিনি দুর্গতদের আরও ত্রাণ বিলির নির্দেশ দেন। মশার উপদ্রব বাড়ায় মশারি বিতরণের নির্দেশ দেন। সামশেরগঞ্জ জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। ফরাক্কার বিডিও রাজর্ষি চক্রবর্তী বলেন, বৈঠক হয়েছে। মন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সবরকম বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কয়েক দিনের ভাঙনে ফরাক্কার ডিয়ারফরেস্ট, নিমতলা, মহাদেবনগর, বাহাদুরপুর, অর্জুনপুর, কুলি, হোসেনপুরের কয়েকশো পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৩০০ পরিবার নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে পুজোর আনন্দ নেই। শুধুই শোনা যাচ্ছে আর্তনাদ। এক জামাকাপড়েই তাঁদের দিন রাত কাটছে। প্রশাসনিক কর্তারা এসে খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছেন। ত্রাণও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা ভুলেই গিয়েছেন পঞ্চমীর সকালের কথা। সপ্তমী বা নবমীও তাদের মনে দাগ কাটবে না। ত্রাণশিবিরে থাকা বধূ মীরা মণ্ডল বলেন, গঙ্গা আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। গ্রামের একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ছে। মনে হচ্ছে পুরো গ্রামটাই তলিয়ে যাবে। পুজো নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কীভাবে ছেলেমেয়েদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারব তা নিয়েই আমরা চিন্তিত। গ্রামের আরেক বধূ কথা মণ্ডল বলেন, প্রতিবার বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকে আমরা ঘর পরিষ্কার শুরু করতাম। মাটির বাড়ির দেওয়াল খড়ি দিয়ে রং করতাম। ষষ্ঠীর দিন সকালে বাড়ির দরজায় বাইরে লিখে রাখতাম এসো মা দুর্গা। এটা আমাদের এখানকার নিয়ম। যাদের ছেলেরা কাজের জন্য বাইরে থাকে তাঁরা চৌকাঠে হলুদের ফোঁটা দিত। কিন্তু এবার কখন পুজো এসে গেল সেটাই বুঝতে পারলাম না। বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকেই গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। কবে গঙ্গা শান্ত হবে কে জানে।
ত্রাণশিবির থেকে মাঝেমধ্যেই তাঁরা গ্রামে ছুটে যাচ্ছে। গঙ্গার পাশে হোসেনপুরে এখন ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে গঙ্গা। বৃহস্পতিবারও বেশ কিছু বাড়ি জলে ভেসে গিয়েছে। শেষ মুহূর্তে গঙ্গার গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য তারা আগে থেকে মজুত করে রাখা জিনিসপত্র সরিয়ে আনছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, নতুন করে আর কোনও গ্রাম প্লাবিত হয়নি। কিন্তু গঙ্গার পাড়ে থাকা গ্রামগুলিতে ভাঙন চলছেই। জল কমলেই সেচ দপ্তর ভাঙন রোধের কাজ শুরু করবে। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী রানিনগরে এসে ফরাক্কার ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। তিনিও ভাঙন রোধের আশ্বাস দিলেও এখনও গঙ্গা শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষ্মণ নেই। বিশেষ করে হোসেনপুর গ্রামে ভাঙন বেড়েই চলছে। ত্রাণশিবিরে পুজো কাটচ্ছেন তাঁরা। গ্রামের বাসিন্দা রবি সরকার বলেন, পুজোর আগে এমনটা হবে বলে কোনওদিনই চিন্তা করতে পারিনি। পুজোর আনন্দ ভুলে এবার বাড়ি হারানোর শোকে গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই মূহ্যমান। কবে সপ্তমী বা নবমী সেসব কেউ খোঁজ রাখছে না। কবে আবার গ্রামে ফিরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘর বাঁধা যাবে সেদিকেই চেয়ে রয়েছেন সকলেই। তবে গঙ্গা সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেকেই পাকা বাড়ি তৈরি করেছিলেন, সেটাও নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। দেবীকে বরণ করার মতো কোনও কিছুই রাখেনি গঙ্গা।