সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
পাড়ুই থানার সাত্তোর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। গত শনিবার রাতে শিমুলিয়া গ্রামে তৃণমূল সমর্থক মিলন শেখের বাড়িতে চড়াও হয় একদল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী। মিলন শেখের পরিবারের দাবি, তাঁদের সকলকে বাড়ি থেকে বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, মিলন শেখ আগে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন। তারপর থেকেই তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। কথা না শোনায় ওইদিন তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপির পক্ষে পাল্টা অভিযোগ করা হয়, গ্রামের বিজেপি সমর্থক সবুর আলির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরা। অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পাড়ুই থানার পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু, রবিবার সকাল থেকে আবারও এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। শিমুলিয়া, ভেড়ামারি, পলশা, বেলুটি সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে শুরু হয় দুষ্কৃতী তাণ্ডব। এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি করা হয়, মাস্কেট থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নিয়ে নেয় বোমা-বন্দুক হাতে দুষ্কৃতীরা। তাদের রুখতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বোলপুর মহকুমা পুলিস আধিকারিক অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে বিরাট পুলিসবাহিনী গ্রামে এসে উপস্থিত হয়। গ্রামগুলি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পার্শ্ববর্তী ইলামবাজার ও লাভপুর থানা থেকে পুলিস এলাকায় চলে আসে। তারপরেও দুষ্কৃতীদের রুখতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিসকে। তাদের ধাওয়া করে পুলিস যখন ভেড়ামারি গ্রামে পৌঁছয় তখন দুষ্কৃতীরা গ্রামগুলির সংযোগকারী মাঠকে ব্যবহার করে শিমুলিয়া গ্রামে চলে যায়। আবার পুলিস শিমুলিয়া গ্রামে পৌঁছলে তারা একইভাবে মাঠ বরাবর অন্য গ্রামে চলে যায়। কার্যত এই চোর-পুলিস খেলা চলাকালীন ব্যাপক বোমাবাজি করা হয় ও গুলিও চালানো হয়। দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করে তাদের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিসকে লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে পুলিসকে ১০-১২ রাউন্ড শূন্যে গুলি চালাতে হয়। চালানো হয় রাবার বুলেটও। গ্রামে অশান্তির জেরে বেশ কিছুজনকে আটক করা হয়। প্রায় তিনঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নতুন করে অশান্তি না হওয়ার জন্য গ্রামে পুলিস মোতায়েন রয়েছে।
তৃণমূল সমর্থক শেখ মিলনের পরিবারের সদস্য রোজেমা বিবি বলেন, আমরা আগে বিজেপি করতাম। কিন্তু, এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। তাই আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিজেপি। গ্রামে থাকতে গেলে তৃণমূল করা চলবে না, বিজেপি করতে হবে, এইভাবে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
শিমুলিয়া গ্রামের বিজেপি সমর্থক জমিরা বিবি বলেন, শনিবার তৃণমূলের কিছু ছেলে আমাদের দু’জন ছেলেকে বাজারের মধ্যে মারধর করার চেষ্টা করে। তারপর রাতে নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আমাদের বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ২০১৯লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি সারা রাজ্যে সন্ত্রাস শুরু করেছে। আমাদের কর্মীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। যারা এই সমস্ত ঘটনার পিছনে রয়েছে পুলিস প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, শনিবার দেবগ্রাম বাজারের কাছে আমাদের এক কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলীরা। তারপর শিমুলিয়া গ্রামের সবুর আলির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রবিবার সকাল থেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পুলিসের সামনেই তাণ্ডব চালায়। যে দলের জেলা সভাপতি পুলিসকে লক্ষ্য করে বোমা মারতে নির্দেশ দেয় তার দলের কর্মীরা তো পুলিসকে লক্ষ্য করে গুলি চালাবে। তাই পুলিস প্রশাসন সক্রিয় হয়ে দোষীদের না গ্রেপ্তার করতে পারলে বীরভূম কিছুতেই শান্ত হবে না।