সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
২০১৬সালে সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়েছে। কিন্তু, বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপকরা এখনও বেতন কমিশনের ৫০শতাংশ পাননি। এনিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার বৈঠকে বসেন কর্মী ও অধ্যাপকরা। কিন্তু, বৈঠক হলেও কোনও সমাধান সূত্র না মেলায় আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করে কর্মিসভা। গত ২সেপ্টেম্বর থেকে কর্মিসভার ডাকে বিশ্বভারতীতে শুরু হয় কর্মবিরতি। যার জেরে থমকে যায় সমস্ত ধরনের সরকারি কাজ। বকেয়া মেটানো ছাড়াও পড়ুয়াদের ফি বৃদ্ধি কমাতে হবে, ছাত্রাবাসগুলির অবস্থা সুস্থ করতে হবে, ক্যান্টিনগুলিতে ভালো খাবারের ব্যবস্থা সহ কলকাতায় গ্রন্থন বিভাগের গেস্ট হাউসের দায়িত্ব পুনরায় কর্মিসভার হাতে দিতে হবে এই সমস্ত দাবিও তোলা হয়।
এতদিন কর্তৃপক্ষ কর্মীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বভারতীতে সরকারি কাজকর্ম। তবে, শুক্রবার রাতে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাছ থেকে কর্মীরা আশ্বাস পান। তারপরই শনিবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন সকলে। কর্মিসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপাচার্যের তরফে জানা গিয়েছে পে কমিশনের বকেয়া টাকা পুজোর আগেই মিটিয়ে দেওয়া যাবে। এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে বিশ্বভারতীর মঞ্জুরি কমিশনের থেকে। এছাড়াও কর্মীদের বাকি দাবিগুলিও খুব শীঘ্রই মেনে নেওয়া হবে।
কর্মিসভার সভাপতি গগন সরকার বলেন, আমাদের পাওনা টাকা আটকে পড়েছিল। তাই আমরা কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছিলাম। উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন, খুব শীঘ্রই বকেয়া মিলবে। তাই শনিবার থেকে আমরা সকলে কাজে যোগ দিয়েছি।
অপরদিকে, স্কলারশিপের টাকা সময়মত না পাওয়ায় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিশ্বভারতীর গবেষক ছাত্র-ছাত্রীদের। তাই শনিবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দপ্তরের সামনে অনশন বিক্ষোভে বসেন তাঁরা। এদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁদের শান্তিপূর্ণ অনশন বিক্ষোভ চলে। গবেষক পড়ুয়াদের দাবি, কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তাদের তরফে শুধুমাত্র আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রায় ২০০জন গবেষকদের ফেলোশিপের মোট প্রাপ্য টাকার এক-তৃতীয়াংশ গতবছর প্রদান করেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। গতবছরও স্কলারশিপের টাকা দেওয়া হচ্ছিল না। সেই দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পর তাঁদের এক তৃতীয়াংশ দেওয়া হয়েছিল। স্কলারশিপের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ টাকা পরবর্তীতে দিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও পাননি পড়ুয়ারা। অন্যদিকে, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া গবেষক পড়ুয়ারা এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা পাননি। এনিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু, বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দেখিয়ে টাকা দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে গবেষকদের ভর্তি প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, সেখানে গবেষকদের এই মর্মে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে যে তাঁরা কোনওরকম নননেট ফেলোশিপের আবেদন রাখতে পারবেন না। কিন্তু, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি এখনও পর্যন্ত অবধি নননেট ফেলোশিপ চালু রেখেছে। গবেষকদের দাবি, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁদের সম্পূর্ণরূপে অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে তাঁদের স্কলারশিপের টাকা দিতে হবে সেই দাবি নিয়ে আগেও বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ অবস্থানে বসেন তাঁরা। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ কোনও কথা না শোনায় এদিন তাঁরা অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেন। পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, আগামী দিনে কীভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তার সিদ্ধান্ত আজ, রবিবার নেওয়া হবে।
বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়েছে। অচলাবস্থা দূর হওয়ায় সকলেই খুশি। গবেষক পড়ুয়াদের বিষয়ে তিনি বলেন, নননেট ফেলোশিপের বিষয় নিয়ে আমরা পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। পড়ুয়াদের পাশাপাশি বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটেও কর্মসচিব জানিয়ে দিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মঞ্জুরি কমিশনের তরফে নননেট ফেলোশিপ নিয়ে কোনও অর্থ পাইনি। যে মুহূর্তে মঞ্জুরি কমিশন ও মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক আমাদের টাকা দেবে, আমরা তখনই তা পড়ুয়াদের দেব।