পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
গত ২৯ ও ৩০ আগস্ট তারাপীঠে ছিল কৌশিকী অমাবস্যা। পরের দু’দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই তারাপীঠে ভিড় জমতে শুরু করেছিল। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলি বাতিল থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর ভক্ত সমাগম কম হয়েছিল। তাঁর মতে, তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ কৌশিকী অমাবস্যার সময় এসেছিলেন। যেটা গত বছর প্রায় পাঁচ লক্ষ ছিল। রেলের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর রেলপথে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ যাত্রী তারাপীঠে এসেছিলেন। এবার ট্রেন বাতিলের জেরে কৌশিকী অমাবস্যার সময় লোক সমাগমে প্রভাব পড়ে। রামপুরহাট জিআরপি আইসি গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, এবছর কৌশিকী অমাবস্যার সময় ১ লক্ষ ২৫ হাজার যাত্রী তারাপীঠে এসেছিলেন। তবে, সড়কপথে এরাজ্য ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে বহু মানুষ তারাপীঠে ভিড় জমিয়েছিলেন বলে মন্দির কমিটির দাবি। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭সালে দেড় কোটি টাকার মতো মদ বিক্রি হয়েছিল। ২০১৮ সালে বিদেশি মদ বিক্রি হয়েছিল ২৫ হাজার ২৬৭ লিটার। বিয়ার ৯৯০৫ লিটার। দেশি মদ ১৪ হাজার ২২৯ বোতল। সব মিলিয়ে গত বছর ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬০০ টাকার মদ বিক্রি হয়েছিল। ফলে, ২০১৭ সালের থেকে গত বছর মদ বিক্রি বেড়ে যায়। এবছর বহু ট্রেন বাতিল থাকায় পুণ্যার্থীর সমাগম কমের আশঙ্কায় মদ বিক্রি কম হবে বলে মনে করেছিল আবগারি দপ্তর। কিন্তু, এবছর গতবারের রেকর্ড ভেঙে দিল। আবগারি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর কৌশিকী অমাবস্যার দু’দিনে তারাপীঠের ১৮টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান থেকে ২৩ হাজার ৬১৪.৩৮ লিটার বিদেশি মদ বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৬টাকা। বিয়ার বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার ২০৫.৩২ লিটার। যার মূল্য ২৪ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৪ টাকা ও দেশি মদ ১৫ হাজার ৯২১ বোতল বিক্রি হয়েছে। যার দাম ১১ লক্ষ ৯৪ হাজার ১১৮ টাকা। মোট ২ কোটি ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ২৪ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের থেকে অনেকটাই বিক্রি বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, এবছর বিদেশি মদের তুলনায় দেশি মদের রমরমা বেড়েছে। তেমনি বিয়ারের বিক্রিও বেড়েছে। অনেকের মতে, বিদেশি মদের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই দেশি মদের দিকে ঝুঁকছে। যদিও আবগারি কর্তাদের দাবি, চোলাই ও অবৈধ মদ ব্যবসায়ীদের উপর রাশ টানার ফলে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে মদ বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে এবছর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ এক লাফে অনেকটা বেড়েছে।
জানা গিয়েছে, মদের দামের অর্ধেক টাকা রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে যায়। আবগারি দপ্তরের রামপুরহাট মহকুমা ডেপুটি কালেক্টর সুহৃদ রায় বলেন, গত দু’বছরের তুলনায় এবছর তারাপীঠে মদ বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে এবছর বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মানুষ বেশি সমাগম হয়েছিল। আবগারি দপ্তরের এক কর্তা বলেন, বিহারে মদ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডের তুলনায় এরাজ্যের মদের গুণমাণ ভালো। ফলে, সেই সময় ওই দুই রাজ্যের বহু মানুষ এখান থেকে মদ কিনে ফিরেছেন।
মন্দিরের সেবাইত পুলক চট্টোপাধ্যায় বলেন, যদিও তারাপীঠ তন্ত্রের জায়গা। মায়ের ভোগে কারন আবশ্যিক। তবে, এখানে মদের এত বাড়াবাড়ি হওয়াটা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, সরকার এখান থেকে প্রচুর টাকা রেভিনিউ পাচ্ছে ঠিকই। তা বলে যুব সমাজকে শেষ করে, এটা কাম্য নয়। পবিত্র তীর্থভূমিতে মদের রমরমা কমিয়ে আনলেই ভালো। তাতে সিদ্ধপীঠের পরিবেশও সুস্থ থাকবে।