ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় অস্থায়ী এনভিএফ কর্মী ছিলেন বিজয়বাবুর বাবা নারায়ণচন্দ্র দাই। চরম আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেই নারায়ণবাবু তিন ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাঝপথে তাঁকে চাকরিও ছাড়তে হয়েছে। যৎসামান্য জমি চাষ করে তিনি সংসার চালিয়েছেন। এমন পরিবারের মেজ ছেলে বিজয়বাবু চন্দ্রযান-২ প্রকল্পের সিনিয়র বিজ্ঞানী। স্বভাবতই ছেলের জন্য গর্বিত নারায়ণবাবু। একইভাবে গ্রামের ছেলে বিজয়কে নিয়ে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
২০০০ সালে দক্ষিণগ্রাম হাইস্কুল থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি স্কলারশিপ পেয়ে বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন। পরে জয়েন্ট এন্টার্ন্স দিয়ে তিনি কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক করেন। এরপর তিনি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে এমটেক পড়ার জন্য ভর্তি হন। সেখানেই পড়াশোনা চলাকালীন অনলাইনে ইসরোর বিজ্ঞানী পদে আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পর হায়দরাবাদে ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ইসরোর বিজ্ঞানী পদে তিনি যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় অধ্যাপকদের সাহায্য নিয়ে তিনি ২০০৮ সালে এমটেক সম্পূর্ণ করেন।
এরপর থেকে ইসরোয় অনেক অপারেশনের সঙ্গে তিনি জড়িত। প্রথমদিকে তিনি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট মিশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি মঙ্গলায়ন মিশনের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি ইসরো থেকে আরএস-১২বি স্যাটেলাইট লঞ্চ হয়। তার অপারেশন ম্যানেজার তিনি। এরপর চন্দ্রযান-২ অপারেশন টিমের সদস্য হন। ১২ বছর ধরে তিনি ইসরোতে কর্মরত রয়েছেন। বাড়ির ছেলের এই সাফল্যে খুশি দাই পরিবার। বিজয়বাবুর দাদা প্রাইমারি শিক্ষক। ছোট ভাই বাপি দাই এমএ, বিএড সম্পূর্ণ করে এসএসসির ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন। বাপিবাবু বলেন, একটা সময় খুব কষ্ট করেই আমাদের সংসার চলেছে। এমন একটা পরিবার থেকে উঠে দাদা ইসরোতে চন্দ্রযান-২ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গর্বে বুক ভরে উঠছে। দাদার আরও সাফল্য কামনা করি। একইভাবে খুশি গ্রামবাসীরা। পুজোর সময় গ্রামের বাড়িতে বিজয়বাবু এলে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, কৃষক পরিবারের ছেলে বিজয়বাবু। অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, আমার বিধানসভা এলাকার ছেলে চন্দ্রযান-২ মিশনের অপারেশন টিমের সিনিয়র বিজ্ঞানী। পুজোয় সময় উনি বাড়ি এলে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
যদিও মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বিজয়বাবু বলেন, চন্দ্রযান-২ অপারেশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। পুজোর সময় বাড়ি যাওয়া হবে কি না এখনই বলতে পারছি না। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ইসরোতে আসা ও চন্দ্রযান-২ টিমের সদস্য হওয়া এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। তবে চন্দ্রযান-২ অভিযান এখনও পুরোপুরি সফল না হওয়ায় এখনই এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাইছি না। বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখনই এই নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে বিক্রমের সঙ্গে ইসরোর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কিছুটা হলেও হতাশ বিজয়বাবু। বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।