বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
২০১৫ সাল নাগাদ প্রকাশ্যে আসা ওই ঘটনায় ব্যাঙ্কের তৎকালীন আধিকারিক ও পরিচালন সমিতির একাংশ জড়িত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা কমিটির তরফে ব্যাঙ্কে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা ব্যাঙ্কের মূল গেটের সামনে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থানে বসেন। মঞ্চের নেতারা সেখানে বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত, গ্রাম বাংলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমবায়ের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। জেলাস্তরে একটি করে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থাকে। তার আওতায় ব্লকে ব্লকে সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা চালু রয়েছে। ব্লক স্তরের সমবায় ব্যাঙ্কের ছাতার তলায় কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি কাজ করে। দীর্ঘ বাম আমলে সিপিএম সমবায়গুলি নিয়ন্ত্রণ করত। পরে সেগুলি তৃণমূল দখল করে সিপিএমের মতো তৃণমূলও বহু জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সমবায়ের বোর্ড দখল করে।
বাঁকুড়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে ২০১২ সালের পর থেকে পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয়নি। ওই সময়ের পর থেকে মনোনীত ব্যক্তিরা পরিচালন সমিতির সদস্য হন। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে ১৫ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর ব্যাঙ্কের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। জেলাশাসককে ব্যাঙ্কের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার বাসিন্দা এক দালালের সঙ্গে কয়েকবছর আগে কর্তৃপক্ষের পরিচয় হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই দালালের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতো দেবাঞ্জন রায় নামে ওই দালালকে ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়। দালাল ব্যাঙ্কের হাতে কিছু জাল কাগজপত্র ধরিয়ে গা ঢাকা দেয়। প্রতারিত হওয়ার পর ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিসের হাত থেকে সিআইডি তদন্তভার নিজেদের কাঁধে নেয়। পরে সিআইডি অভিযুক্ত দালালকে গ্রেপ্তার করে। তবে এখনও পর্যন্ত ওই টাকা উদ্ধার করা যায়নি বলে ব্যাঙ্কের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সাগর স্যান্যাল জানিয়েছেন।
টাকা উদ্ধার না হলেও ব্যাঙ্ক ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে সাগরবাবু দাবি করেন। এদিন তিনি বলেন, বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মোট ২০টি শাখা রয়েছে। ওইসব শাখায় জেলার প্রায় ২০ লক্ষ গ্রাহক লেনদেন করেন। জেলার শতকরা ৮৮-৮৯ শতাংশ কৃষি ঋণ আমরা দিয়ে থাকি। আমাদের আওতায় জেলাজুড়ে মোট ২৯২টি সমবায় সক্রিয় রয়েছে। ব্যাঙ্ক দ্রুত অনলাইন পরিষেবার দিকে এগচ্ছে। গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষিত রাখতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতিটি শাখায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্মীদের কম্পিউটারে ‘লগ-ইনের’ ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের বন্ড কেনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৫-’১৬ এবং ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে ব্যাঙ্কের ৭ কোটি টাকা লোকসান ছিল। ২০১৭-১৮ সালে ব্যাঙ্ক ৩০ লক্ষ টাকা লাভ করে। ২০১৮-’১৯ সালে লাভের অঙ্ক ৫ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।
সমবায় বাঁচাও মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সহ সভাপতি প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরুপের ঘটনায় অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত রয়েছে। শুধুমাত্র একজন দালালের পক্ষে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা সম্ভব নয়। বন্ড কেনার জন্য ব্যক্তিগত আ্যকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। আধিকারিক এবং পরিচালন সমিতির যোগসাজোশ ছাড়া ওই তছরুপ সম্ভব নয়। অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। আমরা এদিন ডেপুটেশন দিয়েছি। দাবিপূরণ না হলে আন্দোলনে নামব।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক তথা ব্যাঙ্কের প্রশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, যথাযথ তদন্ত চালিয়ে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এব্যাপারে আইন তার নিজের পথে চলবে।