বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, এনআরএসের ঘটনা মানা অসম্ভব। যে কোনওদিন এখানে এনআরএসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তাছাড়া, এখানে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক। মাঝেমধ্যে এখানে অকারণেই দুর্বব্যবহার করেন রোগীর আত্মীয়রা। তাই নিরাপত্তার দাবিতে এবং এনআরএসের ঘটনার প্রতিবাদে এখানে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সুপার ডাঃ দেবদাস সাহা বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও চাঙ্গা করার কথা ভাবা হচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবা ব্যহত হবে না বলে আশা করছি।
সোমবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এনআরএসে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে। মৃতের পরিবারের লোকদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় সাতজন জুনিয়র ডাক্তার জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো এদিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলনে নামেন। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে জমায়েত হন। ১২টা ১৫মিনিট নাগাদ নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। সুপার দাবি পূরণের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে না পারায় জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতির ডাক দেন। তাঁরা সুপারের ঘর থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের গেটের সামনে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারীদের গলায় ঝোলানো ছিল পোস্টার।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এই হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক। ওয়ার্ড উপচে রোগীদের যাতায়াতের করিডরে এবং ওয়ার্ডের মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। তারউপর একজন রোগীর সঙ্গে একাধিক পরিবারের লোক ওয়ার্ডে প্রবেশ করছেন। রোগীর আত্মীয়দের ভিড়ে গিজগিজ করছে ওয়ার্ড। এরফলে সুষ্ঠুমতো চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। ওয়ার্ডে ভিড় করতে বারণ করলে রোগীর আত্মীয়রা দুর্বব্যবহার করছেন। আর ওয়ার্ডে কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকছেন না। এছাড়া, জরুরি বিভাগে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের একাংশও জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চোটপাট দেখান। এমন পরিস্থিতির জেরে এখানে কয়েকবার ঝামেলাও হয়েছে। ওই সব সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাঙ্গা করার আশ্বাস দিলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এনআরএসের মতো ঘটনা যে কোনও দিন এখানে ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত চাঙ্গা করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
জুনিয়র ডাক্তারদের এমন আন্দোলন নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এখানে জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় ১০০জন। মূলত তাঁরাই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বে রয়েছেন। কর্মবিরতির জেরে রোগীদের জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা কারা দেবে তা ভেবে কুল পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর আত্মীয়রাও এনিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। রোগীর আত্মীয়দের একাংশ বলেন, আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ আর ওয়ার্ডমুখী হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘক্ষণ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠবে। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য হয়তো নার্সিংহোমে ছুটতে হবে।
হাসপাতালের সুপার অবশ্য বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা পরিষেবা চালাবেন বলে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন। কাজেই, হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ঠিক থাকবে বলেই আশা করছি। পাশাপাশি, ওয়ার্ডে অবাঞ্ছিত লোকের প্রবেশ বন্ধ করা ও নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে এই হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। এখানে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা ১০৬জন।
এদিকে, রোগীর পরিবারের লোকদের একাংশ জুনিয়ার ডাক্তারদের তোলা অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশই খারাপ ব্যবহার করেন।