কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
কালনার বাসিন্দা সায়নী দাসের ছোট থেকেই সাঁতারের প্রতি আগ্রহ ছিল। বাবা রাধেশ্যাম দাস মেয়ের সাঁতারের প্রতি আগ্রহ দেখে সাঁতারের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পাড়ার পুকুরে, ভাগীরথী নদীতে চলে সাঁতারের প্র্যাকটিস। একের পর সাঁতারে সাফল্যের পর সায়নীর স্বপন হয়ে ওঠে সপ্তসিন্ধু পার হওয়ার। তাঁর স্বপ্নের কথা বাবা-মাকে জানান। কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষক রাধেশ্যাম দাস মেয়ের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলেও বিপুল খরচের জন্য তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। অবশেষে বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে ও কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় মেয়েকে ইংলিশ চ্যানেল জয়ের উৎসাহ জোগান। ২০১৭ সালে সায়নী ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন। এরপর জয়ের খিদে আরও বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে অস্টেলিয়ায় রোটনেস্ট চ্যানেল জয় করার পর রাজ্য সরকার তাঁকে খেলশ্রী সম্মান দেয়। তারপরই আমেরিকার ক্যাটালিনা চ্যানেল জয়ের লক্ষ্য নেন সায়নী। ২৬ মে তিনি আমেরিকার ক্যাটালিনা জয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। মেয়ের সঙ্গে যান বাবা রাধেশ্যাম দাস ও মা রুপালি দাস।
শনিবার তিনি জয়ের লক্ষ্যে জলে নামেন। ক্যাটালিনা আইল্যান্ড ও পালোস ভার্দেস পেনিনসুলার মাঝে দীর্ঘ ৩২ কিলোমিটার প্রণালী ক্যাটালিনা চ্যানেল নামে পরিচিত। এদিন দীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করতে সায়নীর সময় লাগে ১২ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট। চ্যানেল জয়ের পরই পাড়ে উঠে তুলে ধরেন ভারতীয় জাতীয় পতাকা। তবে, এই দীর্ঘ জল পথ তেমন মসৃণ ছিল না। জলে তিমি, জেলিফিস ও মারাত্মক শ্যাওলা, কাঁটা জাতীয় জলজ উদ্ভিদের ভয় ছিল। জলও ছিল কনকনে ঠান্ডা। কঠোর অনুশীলন, মনের জোর পারিবারের সকলের উৎসাহে তাঁর এই জয় বলে মনে করছেন সায়নীর শুভানুধ্যায়ীরা। এই জয়ের জন্য সায়নীকে কঠোর অনুশীলন করতে হয়েছে। যেহেতু আমেরিকায় ক্যাটালিনা চ্যানেল জয়ের লক্ষ্যে রাতের অন্ধকারে নামতে হবে, তাই নিজেকে তৈরি করতে পাড়ার পুকুরে সারারাত সাঁতার কেটে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন। পাশাপাশি কালনায় ভাগীরথী নদীতে স্রোতের বিপরীতে দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাঁতার অনুশীলনই তাঁকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। এই জয়ের খবর কালনায় পৌঁছতেই তাঁর শুভানুধ্যায়ী ও পাড়ার বাসিন্দারা আনন্দে মেতে ওঠেন। চলে মিষ্টিমুখও।
কালনা অ্যামেচার সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গৌরাঙ্গ গোস্বামী বলেন, আমরা জানতাম ও সাফল্য পাবে। ওর কঠোর অনুশীলন ও মনের জোর ওকে সাফল্য এনে দিয়েছে। এছাড়াও অনেকে নানা দিক দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রবাসী ভারতীয়রাও সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। ওর সাফল্যে অন্য সাঁতারুরা উৎসাহিত হবে।
সায়নীর কাকা দুলাল দাস বলেন, ইংলিশ চ্যানেল, রোটনেস্ট চ্যানেল জয়ের পর ওর আরও কঠোর অনুশীলন দেখে ক্যাটালিনা জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। শনিবার সারারাত উৎকন্ঠায় কেটেছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ দাদা আমাদের ফোন করে ওর সাফল্যের খবর দেন। আমরা আশা করব ওর সপ্তসিন্ধু জয়ের লক্ষ্যে এতদিন সকলে যেমন পাশে ছিলেন, আগামীতেও থাকবেন। ১২ জুন রাতে ও কলকাতায় ফিরবে।