কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
আগামী ছ’মাসের মধ্যে হলদিয়া টাউনশিপের ক্লাস্টার ফাইভ ও নাইন এলাকায় বন্দর আবাসনের প্রায় ৭০০ভাড়াটিয়াকে ঘর ছাড়ার জন্য বন্দরের তরফে সপ্তাহখানেক আগে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য দূরদূরান্ত থেকে এসে বন্দর আবাসনে ভাড়া নেওয়া বহু পরিবার বিপাকে পড়েছে। শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবেন, তা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে।
হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান জি সেন্থিলভেলকে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(প্রশাসন) অমল দত্ত বলেন, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ কলকাতায় বন্দর আবাসনের ভাড়াটিয়া তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওপরওয়ালার নির্দেশ রয়েছে, হলদিয়াতেও একইভাবে বন্দর আবাসনের ভাড়াটিয়া তুলে দেওয়া হোক। বন্দরের শ্রমিক সংগঠনগুলি এবিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। ১২জুন সবাইকে নিয়ে বৈঠক হবে।
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া টাউনশিপ এলাকার ক্লাস্টার ফাইভ ও নাইন এলাকায় বন্দর আবাসনের ‘এ’ টাইপ প্রায় ৭০০টি কোয়ার্টার ভাড়ায় দেওয়া রয়েছে। সাড়ে তিনশো স্কোয়ার ফুটের কোয়ার্টারগুলি একসময় বন্দরের শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ হতো। বহু কর্মী অবসর নেওয়ায় পড়ে থাকা খালি কোয়ার্টারগুলি গত দু’দশক ধরে ১১মাসের লিজ রেন্ট ভিত্তিতে ‘আউটসাইডার’দের ভাড়ায় দেওয়া হচ্ছে। ঘরভাড়া দিয়ে বন্দর প্রতিবছর প্রায় তিন কোটি টাকা আয় করে।
বন্দর আবাসনের ভাড়াটিয়ারা বলেন, সপ্তাহখানেক আগে কয়েকজন ভাড়াটিয়া ১১মাসের লিজ রিনিউ করতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা সেইসময় বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন। আগামী ছ’মাসের মধ্যে বন্দরের আবাসন ছাড়ার নির্দেশের বিষয়টি তখনই জানতে পারেন ভাড়াটিয়ারা। ওই ভাড়াটিয়াদের লিজ রিনিউ করা হলেও আগামী ছ’মাসের মধ্যে তা ছাড়তে হবে বলে বলে ডেপুটি চেয়ারম্যান বিশেষ ‘নোট’ দেন বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই বন্দরের ভাড়াটিয়াদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়।
তাঁরা বলেন, ১১মাসের ভাড়া বাবদ লিজ রিনিউ করার সময় বন্দরকে এককালীন ৩৮হাজার টাকা জমা দিতে হয়। আলাদা করে বিদ্যুৎ ও জলের ভাড়া দিতে হয়। সবমিলিয়ে বন্দরকে প্রতি মাসে ৪২০০টাকা ভাড়া গুণতে হয়। ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে উচ্ছেদের নোটিস জারি করে কৌশলে ভাড়া বাড়াতে চাইছে। প্রসঙ্গত, বন্দরের এই ভাড়াটিয়াদের সিংহভাগই বন্দরের কর্মী নয়। কিছু বন্দরের অবসরপ্রাপ্তদের পরিবারও রয়েছে।
অভিভাবকরা বলেন, ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য দূরদূরান্ত থেকে এসে টাউনশিপে বন্দরের আবাসন ভাড়া নিয়েছি। হলদিয়া শহরের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য বহু শিক্ষকও এখানে এসে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন। পড়াশোনা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার পাশাপাশি বন্দরের আবাসনগুলি অপেক্ষাকৃত কম খরচে পাওয়া যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ হঠাৎ উচ্ছেদের নোটিস দেওয়ায় আমরা অথৈ জলে পড়েছি।
হলদিয়া বন্দরের ভারতীয় মজদুর সংঘের নেতা প্রদীপ বিজলি বলেন, হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের এই তুঘলকী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানকার অবস্থার প্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা হলদিয়ায় সঠিক নয়। কলকাতায় হাজার স্কোয়ার ফুটের বন্দর আবাসনগুলি ভাড়ার নামে বেদখল ছিল। হলদিয়ায় তা হয় না। তাঁর অভিযোগ, হলদিয়ার ডেপুটি চেয়ারম্যানের একগুঁয়ে মনোভাবের জন্যই ফের সমস্যা তৈরি হতে চলেছে। উচ্ছেদের নোটিস প্রত্যাহার না করলে আবাসিকদের নিয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যানের বাংলো ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বন্দরের সিটু নেতা বিমান মিস্ত্রি বলেন, উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আমরা মানছি না। এখান থেকে ভালো আয় হওয়ার পরও বন্দর কোন উদ্দেশ্যে একাজ করছে তা জানতে চাইব।