উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
রাইপুরের লোয়াবেড়িয়া গ্রামের ছাত্রী অনিমা মুর্মুর বাবা শিবু মুর্মু পেশায় দিনমজুর। মা কাজল মুর্মু গৃহবধূ। তাঁদের বাড়ির অবস্থা মোটেও ভালো নয়। একচিলতে ঘরে কোনওমতে দিন গুজরান করে তাঁর পরিবার। তবে সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে অনিমার এই সাফল্যে খুশি পরিবারের লোকজন। সাঁওতালি মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়া অনিমা প্রথম ভাষা সাঁওতালিতে ৯০, দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজিতে ৬৬ , ভূগোলে ৮০, দর্শনে ৯৪ এবং সংস্কৃতে ৯৩ নম্বর পেয়েছেন। ভবিষ্যতে সাঁওতালি ভাষা নিয়েই তাঁর পড়ার ইচ্ছা রয়েছে। যদিও অভাবের সংসারে কীভাবে তাঁর উচ্চশিক্ষা হবে তা নিয়ে অস্মিতা চিন্তায় রয়েছেন। অনিমা বলেন, স্কুল থেকেই আমার সাফল্যের খবরটা পেলাম। তখন বাড়িতে ছিলাম। খবর পেয়েই স্কুলে এসেছি। আগামীদিনে সাঁওতালি ভাষা নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা রয়েছে।
অনিমার বাবা শিবু মুর্মু বলেন, ঘরে খুব অভাব। সময়মতো ১০০ দিনের কাজ পাই না। অনিমা এত ভালো ফলাফল করার পরেও কীভাবে যে ওকে আরও পড়াতে পারব সেটাই এখন ভাবছি।
অন্যদিকে, রানিবাঁধ ব্লকের বনশোল গ্রামের ছাত্রী সনকার বাবা অনিল হেমব্রমও পেশায় দিনমজুর। মা ঊর্মিলা হেমব্রম গৃহবধূ। সনকার বাড়ির অবস্থাও মোটেই ভালো নয়। তাঁর বাবা পেশায় দিনমজুর হলেও প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারেন না। একটি মাত্র মাটির বাড়িতে তাঁরা কোনওমতে বসবাস করেন। সনকা ওই স্কুল থেকেই ৪৪৫নম্বর পেয়েছেন। প্রথম ভাষা সাঁওতালিতে ৮৮, দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজিতে ৫০, ভূগোলে ৮৫, দর্শনে ৯৩ এবং সংস্কৃতে ৮৪ নম্বর পেয়েছেন। স্বভাবতই সনকার ফলাফলে উচ্ছ্বসিত পরিবার। ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করতে চান সনকা।
সনকা এদিন বলেন, সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই প্রথম হওয়ার খবরটা পাই। ভূগোল আমার অত্যন্ত প্রিয় বিষয়। তাই ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। সনকার মা ঊর্মিলাদেবী বলেন, মেয়ে ফলাফল তো ভালো করেছে। কিন্তু, আগামীদিনে পড়াব কী করে? ওর বাবা দিনমজুর হলেও সবদিন তো আর কাজ থাকে না। তাই কেউ সাহায্য করলে পড়াশোনা করাতে পারব।
জঙ্গলমহলের রাইপুর ব্লকের প্রত্যন্ত চাতরি গ্রামে ওই স্কুলটি অবস্থিত। বিদ্যালয়ে ৯৮ শতাংশ তফসিলি উপজাতির ছাত্রছাত্রীরা রয়েছে। এই স্কুলের পরিকাঠামো জেলার অনেক স্কুলকেই হার মানায়। তা স্বীকার করে নিচ্ছেন সাফল্য পাওয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে তাঁদের পরিবারের লোকজনও। ওই দুই ছাত্রীও জানিয়েছেন, স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠনও খুব ভালো হয়। তাই তাঁদের স্কুলের বাইরে আলাদা করে টিউশন নিতে হয়নি।