বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
আসানসোল- দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক মোদি বলেন, ঘটনায় একজন যুবককে আটক জরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় পুলিস মোতায়েন করা রয়েছে। এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে আকন্দারা গ্রামে ২৪ প্রহরের হরিনাম সংকীর্তন চলছিল। ওইদিন রাতে অনুষ্ঠান চলাকালীন বাউড়ি পাড়ার মিলন হাজরা নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে এলাকার এক ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ছাত্রীর পরিবারের লোকজন জানার পর অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে মলানদিঘি ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার অভিযুক্ত যুবককে পুলিস আটক করে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এরপরেই ওই রাতে অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে দলবল নিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জাহিরুল মিদ্দা হামলা চালান। অভিযুক্তের পরিবারের লোকজনকে ব্যাপক মারধর করা হয়। মারধর করে যুবকের বাবার পা ভেঙে দেওয়া হয়। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। এরপরেও এলাকায় ওই অভিযুক্ত যুবকের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়।
বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি লোকজনকে মারধর করা হয়। ঘটনায় পাঁচজন গ্রামবাসী জখম হন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। একের পর এক হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপরই তাঁরা পঞ্চায়েত প্রধান পীযূষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলা চালান। প্রধানের বাড়ির বেশকিছু জিনিসপত্র সহ চারচাকা গাড়িতে ভাঙচুর চালান গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি পরিবারের লোকজনকে মারধরও করে। ঘটনায় প্রধানের পরিবারের বেশ কয়েকজন জখম হন। এরপরে গ্রামবাসীরা এলাকার তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। পাশাপাশি অভিযোগকারী ছাত্রীর বাড়িতেও ভাঙচুরের পাশাপাশি সদস্যদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পঞ্চায়েত সদস্য জাহিরুল মিদ্দা সহ তাঁর অনুগামীরা গ্রাম ছেড়ে অন্য এলাকায় গা ঢাকা দেন। পঞ্চায়েত প্রধান মলানদিঘি ফাঁড়িতে আশ্রয় নেন। গ্রামে তৃণমূলের একটি অংশের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ ছিল। পঞ্চায়েত প্রধানের কয়েকজন অনুগামী ও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জাহিরুল মিদ্দা ওরফে কাঙ্গাল দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে দাদাগিরি চালাচ্ছিলেন বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এদিন সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে গ্রামের অনেকে মনে করছেন।
অভিযুক্ত যুবকের দাদা ও গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, যুবক অন্যায় করার জন্য থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। দোষীর শাস্তি পুলিস দেবে। তাই বলে সবার উপর এভাবে হামলা চালাতে পারে না। তাঁদের অভিযোগ, জাহিরুল দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদাগিরি করছেন। এলাকায় তোলাবাজি সহ একাধিক দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম করে চলেছেন। গত কয়েকমাস আগে বিজেপির এক নেতা খুনের ঘটনাতেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কয়েকদিন আগে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের টিউবওয়েল বালি ও পাথর দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। জলের অভাবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা ওকে এলাকায় ঢুকতে দেব না। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
পঞ্চায়েত প্রধান পীযূষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ঘটনাটি একটি ছাত্রীর শ্লীলতাহানিকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। তবে, এদিন রাতে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সকলে বিজেপির কর্মী। বাইরে থেকেও প্রচুর বিজেপি কর্মী এসেছিল। তারা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল। পরিবারে আমার কাকু সহ আরও দু’জনকে মারধর করেছে। দলীয় নেতৃত্বকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, জাহিরুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। বিজেপি বাইরে থেকে লোক এনে হামলা চালিয়েছে।
যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, এটি কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়। যারা পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তারা বিজেপির কেউ নন। তারা সাধারণ গ্রামবাসী। আমি খবর নিয়ে দেখেছি, এই ঘটনাটি গ্রামবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।