বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
লেবার গেটের কাছেই এই কারখানার কর্মীদের আবাসন। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর ভিআরএস নেওয়া কর্মীরা সকলেই আবাসন ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এখন সন্ধ্যার সেগুলি দুষ্কৃতীদের নিরাপদ ঠাঁই হয়ে ওঠে। তারা ইতিমধ্যে দেওয়াল পর্যন্ত ভেঙে নিয়ে গিয়েছে। একটা সময় যে এলাকা ১০০ বছরের পুরনো এই সংস্থার কর্মীদের ভিড়ে সরগরম হয়ে থাকত, এখন সেখানেই যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
মঙ্গলবার সকালে সংবাদমাধ্যমে এনসিএলটির নির্দেশ জানার পর সেই নিস্তব্ধতা ভেদ করে প্রাক্তন কর্মীদের মুখে হাসির হিল্লোল। এখানকার এক সময়ের কর্মী বিনয় মিশ্র বলেন, আগে এই এলাকার নাম ছিল হীরাপুর। কারখানাটি ১৯১৮ সালে স্থাপিত হওয়ার পরেই এই এলাকাও বার্নপুর নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই কারখানার ঝাঁপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন বন্ধ হয়ে গেল তখন সবাই ভেঙে পড়েছিলেন। কারণ এই কারখানার উপর শুধু এখানকার কর্মীরা নির্ভরশীল ছিলেন না। বহু লোক দোকান করে সংসার চালাচ্ছিলেন। তাঁদেরও আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই রায় শোনার পর আবার সবাই আশায় বুক বাঁধছেন।
কারখানার গেটের কাছে পটল, কুমড়ো বিক্রি করছিলেন বাঁকুড়ার এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, আগে এই গেটে সব্জি বিক্রি করে ভালোভাবে সংসার চলে যেত। কিন্তু, এখন দিনে ২০০ টাকারও সব্জি বিক্রি হয় না। কেউ গেটের দিকে আসেই না। তবুও বিক্রির আশায় প্রতিদিনই সব্জি নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করি।
কারখানার প্রাক্তন কর্মী বিজয় যাদব বলেন, আমাদের জোর করে ভিআরএস নিতে বাধ্য করিয়েছিল। এখনও পিএফের টাকা পাইনি। আমরা কারখানার গেট খোলার জন্য বহু আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু, পাশে সেভাবে কাউকে পাইনি। হাওড়ার ৫৭ জন কর্মী লড়াই করে এই রায় এনেছেন। দেরি হলেও আবার নিশ্চই কারখানায় প্রাণ ফিরবে।
কারখানার এক সময়ের ঠিকাকর্মী মুকন্দর সিং বলেন, গেট বন্ধ হওয়ার সময় ২৫০জন স্থায়ী কর্মী ছিলেন। এছাড়া ঠিকাকর্মী মিলিয়ে সেই সময় এক হাজার জন কাজ করতেন। কারখানা তখনও লাভে চলছিল। আমাদের তৈরি ওয়াগান যুগস্লোভিয়া, ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। অথচ এরকম একটা সংস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের মর্জিমাফিক বন্ধ করে দিল। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, জয় একদিন নিশ্চিত হবে। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লড়তে পারিনি। কিন্তু, হাওড়ার ৫৭জন কর্মী ওদের নড়িয়ে দিয়েছে। ওদের জন্যই আমাদের নৈতিক জয় এসেছে। একটা নতুন কারখানা এই কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আসেনি। এখানকার সংসদ সদস্য বাবুল সুপ্রিয় ভারী শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। তিনিও একটাও শিল্প স্থাপন করেননি। তাঁর আমলেই দু’টি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার কারখানা খুলবে ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে এই রায় যদি কেন্দ্রীয় সরকার না মানে তাহলে সেটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
কারখানার আরএক প্রাক্তন কর্মী বলেন, এতদিন পর কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। সত্যিই বহুদিন পর কারখানার গেটে প্রাণ খুলে হাসলাম।