বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
একদা কংগ্রেসের ঘাঁটি নওদা বিধানসভা কেন্দ্রে ঘাসফুলের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে। বিগত বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে নওদার মাটিতে ঘাসফুল বাহিনীর উত্থানের ইঙ্গিত মিলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হওয়ায় ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নওদায় প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস ৫১.৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এখানে কংগ্রেসের ভোট কমে দাঁড়ায় ৪৯.৩৩ শতাংশ। সেবার এখানে তৃণমূল ভোট পায় ১৪.৯৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ২৩.৮৬ শতাংশ। সেই নির্বাচনে এখানে ঘাসফুল বাহিনীর স্থান ছিল দ্বিতীয়। সেবার কংগ্রেস জয়লাভ করলেও তাদের ভোট কমে দাঁড়ায় ৩৪.৪৬ শতাংশ।
সেই নির্বাচনের পর কংগ্রেসে ধস নামায় তৃণমূল। কংগ্রেসের কাছ থেকে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূল শক্তিশালী হয়। এই শক্তির উপর ভরসা করেই তৃণমূল গত পঞ্চায়েত ভোটে এখানে দাপিয়ে বেড়ায়। ঘাসফুল বাহিনীর সেই দাপটের কাছে কংগ্রেস কার্যত আত্মসমর্পণ করে। পঞ্চায়েত ভোটের পর এলাকায় কর্মীসভা করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তৃণমূলে শামিল হন স্থানীয় বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা আবু তাহের খান। এবার লোকসভা ভোটে তাহেরসাহেব মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ছিলেন। এদিন দলের নওদা ব্লক কমিটির বর্ধিত সভায় সমগ্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে দলের ব্লক সভাপতি ছাড়াও জেলা নেতা তথা বিধায়ক শাওনী সিংহরায়, জেলা পরিষদের সদস্য সঞ্জয় হালদার, উপনির্বাচনের দলীয় প্রার্থী শাহিনা মমতাজ বেগম, অঞ্চল কমিটির সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের শারীরী ভাষা থেকেই স্পষ্ট যে উপনির্বাচন নিয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী।
বৈঠকের পর তৃণমূলের এক নেতা বলেন, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ময়দানেই আমাদের সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষা হয়েছে। কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি একজোট হয়েও আমাদের শক্তির সঙ্গে টক্কর দিতে পারেনি। ওদের ফাঁদে পা না দিয়ে ওদেরকে ব্রাজিলের ‘সাম্বা’ নৃত্য দেখিয়েছিলাম। উপনির্বাচনের ময়দানে বিরোধীরা ছন্নছাড়া। এবার ময়দানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের গোল করব। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বলেন, জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। দলীয় ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোও আমাদের টার্গেট। তাই ভোটগ্রহণ পর্বের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া, দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী জনসভার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে ক্ষয় ধরার পাশাপাশি বামফ্রন্টের ভোট ব্যাঙ্কে কার্যত ধস নেমেছে। একদা কেন্দ্রটি বামফ্রন্ট শরিক আরএসপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখানে আরএসপির ভোট ছিল ৪২.৭৯ শতাংশ। আর বিজেপির ভোট ছিল মাত্র ২.৪১ শতাংশ। পরের লোকসভা ভোটে আরএসপির ভোট এক ধাক্কায় কমে দাঁড়ায় ২৫.২৬ শতাংশ। আর বিজেপির ভোট সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৯৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আরএসপির ভোট আরও কমে যায়। তা দাঁড়ায় ২৩.৬৬ শতাংশে। সেবার বিজেপির ভোট আরও কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪.২৩ শতাংশে। কিন্তু, সারাবছর এলাকায় বিজেপির তেমন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায় না। ভোটের সময়ও গেরুয়া শিবিরের উল্লেখযোগ্য প্রচার দেখা যায় না। এবার উপনির্বাচনেও তাদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই কিছুটা প্রচার করছে পদ্ম শিবির। কাজেই, তাদের ভোট বৃদ্ধি নিয়ে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, বাম স্রোত এখন রামমুখী। তাই বিজেপির ভোট বাড়ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তৃণমূলে নেগেটিভ ভোটও পদ্মে গিয়ে পড়ছে। বামফ্রন্টের নেতাদের একাংশ বলেন, বিভিন্ন কারণে বামফ্রন্টের ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। তা উদ্ধার করাই উপনির্বাচনের মূল লক্ষ্য। তবে, বিজেপির প্রভাব বাড়ার জন্য তৃণমূলের রাজনৈতিক কার্যকলাপই দায়ী।