বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
বুধবার সকালের ট্রেন ধরে বেলডাঙা থেকে আমি মা ও আমার দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসি। টিকিট কাউন্টারের সামনে টিকিট কেটে আমরা উপরে উঠে আসি। মায়ের বেশ কিছুদিন থেকে গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা হচ্ছিল। আজ মায়ের পেটের ছবি করানোর কথা ছিল। আর আমার কোমরের ব্যথা হচ্ছে। একসঙ্গে দু’জনে এলে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুবিধা হবে তাই মাকে নিয়ে এসেছিলাম। আমি তিনতলায় ছিলাম। মা দোতলায় ছিল। ছেলের ঠান্ডা লাগছে বলায় তাকে নিয়ে সবে বাইরে বের হয়েছি। তখনই অনেক মানুষ হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছে। সবাই বলছে উপরে আগুন লেগেছে। তাড়াতাড়ি ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে আমিও তাদের সঙ্গে নীচে নামার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু দুই ছেলে মেয়েকে সামলে নামতে পারছিলাম না। সবাই ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন কেউ কাউকে দেখছে না। যে যেদিকে পারছে, যার উপর দিয়ে পারছে বাঁচার তাগিদে নীচে নামার চেষ্টা করছে। এরমধ্যে আমার ছেলে হাত থেকে ছিটকে আমার পায়ের তলায় পড়ে যায়। ছেলেকে তুলতে গিয়ে মেয়ে আমার হাতছাড়া হয়ে যায়। আমার তখন স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে। ভাবলাম, ছেলেকে কোথাও রেখে মেয়ের খোঁজ করব। নীচে নেমে দেখি, মা পড়ে রয়েছে। তার উপর দিয়েই শয়ে শয়ে মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে। মাকে আঁকড়ে ধরে চিৎকার করছি। পরে কয়েকজন এসে মাকে তুলে নিয়ে যায়। ছেলের হাত ধরে উদভ্রান্তের মতো তাদের পিছু পিছু ছুটছি। মেয়ের কথা মনে নেই। মায়ের মৃত্যু সংবাদের পরই পরিচিত একজন মেয়েকে আমার কাছে পৌঁছে দিয়ে যায়। চোখের সামনে মানুষের এই আতঙ্ক আর আর্তনাদ জীবনে ভুলতে পরব না। আর কোনওদিন চিকিৎসার জন্য এখানে আসতেও পারব না।
আমার চোখের সামনেই মায়ের দেহ দেখতে পেয়েছি। কয়েকজন সাহায্য না করলে মাকে সেখান থেকে তুলে আনতে পারতাম না। অথচ ডাক্তাররা মায়ের মৃত্যুর কথা স্বীকার করতে চায়নি। সকাল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হুড়োহুড়িতে মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে মানতেই চাইছে না। বারবার আমাকে বলা হয়েছে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে খতিয়ে দেখা হবে। এমনকী অভুক্ত অবস্থায় দুই শিশুকে নিয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পড়ে থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও নজর দেয়নি। সকলের মতো আমিও বলছি, যা ঘটেছে পুরোটাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে। সবাই তখন নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করছিল। কেউ এগিয়ে এসে মাকে উদ্ধার করলে এভাবে মায়ের মৃত্যু হতো না।