পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
রবিবার হাঁসখালি থানার ফুলবাড়ি ফুটবল মাঠে নিজের পাড়ার সরস্বতী পুজোর জন্য শনিবার বাইরের কোনও কাজ রাখেননি সত্যজিৎবাবু। সকাল থেকেই নিজের বাড়ি ও এলাকাতেই ছিলেন তিনি। বিকেলে তাঁর বাড়ি থেকে দু’মিনিটের হাঁটাপথে ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যান তিনি। এরপর মণ্ডপ থেকে মাত্র ৭০ মিটার দূরে করা একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অতিথিদের একে একে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসেন সত্যজিৎবাবু।
এরপর ছেলেকে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখার জন্য মাঠে দর্শক আসনের একটি চেয়ারেও বসেন। রাত ৮টা ২০মিনিট নাগাদ পরিচিত একজনকে দিয়ে ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। মঞ্চে সেই সময় স্থানীয় এক খুদে শিল্পীর অনুষ্ঠান চলছিল। মঞ্চ থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরত্বে মাঠের একটি চেয়ারে মঞ্চের দিকে মুখ করে বসেছিলেন তিনি। তাঁর সামনে নীচে বসে স্থানীয় মানুষজন অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। ঘড়ির কাঁটা তখন ৮টা ৩০মিনিট ছুঁই ছুঁই। হঠাৎই গুলির আওয়াজে হতচকিত হয়ে পড়েন উপস্থিত দর্শকরা। ততক্ষণে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন সত্যজিৎবাবু।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাথার পিছন দিক থেকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয় তাঁকে। দুষ্কৃতীকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন উপস্থিত সকলে। বিধায়ককে গুলি চালানোর ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট পর ফুলবাড়ির ওই মাঠে পৌঁছয় পুলিস। ওই মাঠ ও মূল রাস্তার সংযোগস্থল থেকে পুলিস একটি পিস্তল উদ্ধার করে।
ফুলবাড়ির ওই মাঠে শনিবার রাতেই মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিসবাহিনী। দক্ষিণপাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন প্রামানিক বলেন, আমি ওই বিধায়কের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু অতিথিরা চলে যাওয়ার পর মাত্র ১০ মিনিটের জন্য আমি বাড়িতে যাই শীতের পোশাক আনতে। তার মধ্যেই ফোন আসে, বিধায়ককে গুলি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে বিধায়ককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শোকস্তব্ধ হাঁসখালি। শীতের রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে একের পর এক পুলিস আধিকারিকদের গাড়ির সাইরেনের শব্দে কার্যত রবিবারের ভোর হয় ওই এলাকায়। রবিবারও এলাকা ছিল থমথমে। সকালের দিকে বগুলা রেলবাজারের দোকান খোলা হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। অঘোষিত বন্ধের চেহারায় হাঁসখালি। অটো সহ অন্যান্য যান চলাচলও অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম চলে এদিন।
রবিবার দুপুরে ময়নাতদন্তের পর দেহ নিয়ে আসা হয় ফুলবাড়ির মাঠে। শনিবারের ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে দেহ রাখা হয়। এদিন সেখানেই রাজ্য ও জেলা নেতারা শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত বিধায়ককে। সোয়া একটায় দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধায়কের বাড়িতে। স্বজন হারানোর কান্নায় ভেঙে পড়েন অসংখ্য মানুষ। বিধায়কের স্ত্রী রুপালি স্বামীর নিথর দেহ দেখে জ্ঞান হারান। সন্তান শোকে বাকরুদ্ধ হন বিধায়কের মা অঞ্জনাদেবী।
এখান থেকে সত্যজিৎবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মাজদিয়ার দলীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকেই রবিবার রাতে নবদ্বীপে রাজ্যের দুই মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উপস্থিতিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সত্যজিৎবাবুর। যে পুজোর মাঠে এই ঘটনা, যে পুজোর মূল উদ্যোক্তা সত্যজিৎবাবু রবিবার সেই মণ্ডপে পুজো হয়নি। ২৬ বছরের সরস্বতী পুজোও আর করতে চান না তাঁর অনুরাগীরা।