বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
খুব অল্প সময়ের মধ্যে জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। জনসভায় জনসমাগম থেকে, বড়সড় সভার আয়োজনে সত্যজিতের উপর নির্ভর করতে হতো জেলা নেতাদের। ২০১৫ সালের আগেও খুব এটা জনপ্রিয় ছিলেন না সত্যজিৎ। যদিও তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন দিয়ে। ১৯৭৯ সালে জন্ম সত্যজিতের। দক্ষিণপাড়া রাধাসুন্দরী পাল বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে মাজদিয়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভর্তি হন বগুলা কলেজে। কিন্তু কলেজ সম্পূর্ণ করেননি। বাবা সমীর বিশ্বাস পেশায় চাষি ছিলেন। মা অঞ্জনা বিশ্বাস গৃহবধূ।
১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন সত্যজিৎ। ২০০৩ সালে দক্ষিণপাড়া-১ অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি হন। ২০০৮ সালে হন হাঁসখালি ব্লক যুব সভাপতি। ২০১৩ সালে দক্ষিণপাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। কিছুদিনের জন্য প্রধানও হন তিনি। ২০১৪ সালে প্রধান পদ ছেড়ে দক্ষিণপাড়া রাধাসুন্দরী পাল বিদ্যাপীঠে করণিক পদে যোগ দেন।
এরপরই রাজনীতির বড় আঙিনায় প্রবেশ সত্যজিতের। ২০১৫ সালে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন। উপ নির্বাচনে ৩৭ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন। বিধায়ক হওয়ার পর তিনি জেলার যুব সভাপতির পদ পান। ২০১৬ সালে ফের কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন। ৪৩ হাজার ৭০০টি ভোটে জয়ী হন। ২০১৮ সালে নমঃশূদ্র উন্নয়ন ও মতুয়া উন্নয়নে জেলায় দলীয়ভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পান। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর দলের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতির পদটিও তিনিই সামলাতেন।
২০১৫ থেকে বিধায়ক সত্যজিতের দ্রুত উত্থান হয়। হাঁসখালি ও কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে তিনিই শেষ কথা ছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে হাঁসখালিতে গত পঞ্চায়েতে চমকপ্রদ রেজাল্ট করে শাসক দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাঁর এই উত্থানের নেপথ্যে রয়েছেন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। সত্যজিৎকে নিজের সন্তানসম স্নেহ করতেন তিনি। সাংগঠনিক কাজে অনেকটাই সত্যজিতের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। সম্প্রতি বিজেপি মতুয়া মতাবলম্বীদের কাছে টানার চেষ্টা করেছিল। এর মোকাবিলায় সত্যজিৎকেই মাঠে নামিয়েছিলেন গৌরীবাবু। মতুয়াদের নিয়ে একাধিক আন্দোলন করেছেন সত্যজিৎ। মাজদিয়ায় বড় জনসভা করেছেন। মতুয়া মতাবলম্বীদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন তিনি।
বিধায়ক সত্যজিতের দ্রুত উত্থানই কি কাল হল ? এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে শাসকদলের অন্দরে। হাঁসখালি এলাকায় যিনিই দাপুটে নেতা হয়েছেন, তিনিই খুন হয়েছেন। এর উদাহরণ দুলাল বিশ্বাস। দুলালবাবু হাঁসখালি ব্লক সভাপতি ছিলেন। বছর দেড়েক আগে বগুলায় নিজের পার্টি অফিসের মধ্যে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন দুলাল। তিনিও হাঁসখালির দাপুটে নেতা ছিলেন। তাঁর কথায় বাঘে গোরুতে একঘাটে জল খেত। সীমান্ত এলাকায় যাবতীয় কারবার তাঁর অঙ্গুলি হেলনেই চলত বলে অভিযোগ ছিল। সত্যজিৎও ছিলেন হাঁসখালি ও কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের একচ্ছত্র অধিপতি। দুই ব্লকেই সীমান্ত এলাকা রয়েছে। আর সীমান্তের বেআইনি কারবারে তাঁরও অঙ্গুলি নির্দেশ ছিল বলেও অভিযোগ আছে।
যুব নেতার খুনের প্রতিবাদে এদিন জেলার সর্বত্রই মৌন মিছিল, প্রতিবাদ সভা হয়েছে। চাকদহ, মদনপুর, শিমুরালি, রানাঘাট, তেহট্ট, করিমপুরে দলের কর্মী সমর্থকরা পথে নেমেছিলেন। এদিন বিকেলে নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, দক্ষ সংগঠক ছিলেন সত্যজিৎ। এলাকার মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। মানুষের বিপদ আপদে তিনি পাশে দাঁড়াতেন। এই খুনের পিছনে বিজেপি জড়িত। তারাই পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে আমাদের দক্ষ সংগঠককে।